নোটিশেও সাড়া দিচ্ছে না ওসমানী হাসপাতালের ব্রাদার সাদেক

নোটিশেও সাড়া দিচ্ছে না ওসমানী হাসপাতালের ব্রাদার সাদেক

দেড় মাস ধরে লাপাত্তা সিলেটের আলোচিত ব্রাদার সাদেক। পুলিশ তাকে হন্য হয়ে খুঁজছে। নোটিশের পর নোটিশ দিচ্ছে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর। কারণ দর্শাতে বলা হচ্ছে তাকে। এতেও সাড়া নেই। প্রশ্ন দেখা দিয়েছে সাদেক কোথায়। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা জানিয়েছেন; সাদেক দেশেই আসে। নিজেকে রক্ষা করতে সে কৌশল খুঁজছে। সরকারের নানা পর্যায়ে ধরনা দিচ্ছেও বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ব্রাদার ইসরাইল আলী সাদেক।

সে একাই নিয়ন্ত্রণ করতো ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। তার বাহিনীর কাছে সবাই ছিল অসহায়। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী, এমপিদের নিজের লোক পরিচয় দিয়ে সে প্রভাবশালী হয়ে ওঠে। গত ১০ বছরে সে হাসপাতালের এমন কোনো খাত নেই যেখান থেকে টাকা কামাই করেনি। হাসপাতালের প্রশাসনের দাপ্তরিক অনেক জায়গায় বসিয়ে রাখতো নিজের লোক। এতে করে সাদেক কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। অবৈধ ফেনসিডিলসহ সে একবার র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিল। গত ৯ই জানুয়ারি অদিতি রানী (ছদ্মনাম) এক নার্সের কাছ থেকে সাড়ে ৬ লাখ টাকা ঘুষ গ্রহণ করতে তার সহযোগী ব্রাদার আমিনুল ও সুমনকে পাঠায়। এ সময় আমিনুল ও সুমন টাকাসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হয়। পালিয়ে যায় ব্রাদার সাদেক। এ ঘটনার পর হাসপাতালে তার একের পর এক দুর্নীতির চিত্র আসতে থাকে। ঘটনার দিন রাতেই হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা বাদী হয়ে সাদেককে প্রধান আসামি করে ৩ জনের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় মামলা দায়ের করেন। তবে সাদেক থেকে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে। হাসপাতালের কর্মক্ষেত্রে অনুপস্থিত থাকার দায়ে সাদেককে জানুয়ারি মাসে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর থেকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয় এবং সশরীরে এসে কারণ দর্শানের জবাব দিতে বলা হয়। কিন্তু সাদেকের সেই নোটিশের জবাব মিলেনি। এর ফলে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মাকসুরা নুর গত ১৯শে ফেব্রুয়ারি ঘুষ দুর্নীতির অভিযোগ এবং কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার ব্যাখ্যা চেয়ে ফের নোটিশ দিয়েছেন। ১০ দিনের মধ্যে নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়েছে। ইতিমধ্যে ৩ কার্যদিবস চলে গেলেও সাদেকের পক্ষ থেকে জবাব আসেনি।

নোটিশে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মাকসুরা নুর জানান-ঘুষ দুর্নীতিতে সাদেকের সম্পৃক্ততা রয়েছে। এ ছাড়া গত ৯ই জানুয়ারি থেকে কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছে। ১৩ই জানুয়ারি এ ব্যাপারে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কর্মক্ষেত্রে যোগদান করতে বলেছিল। এর জবাব না আসায় ২৯শে জানুয়ারি অধিদপ্তর থেকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়। ওই কারণ দর্শানোর নোটিশেরও জবাব পাওয়া যায়নি। কর্মচারী বিধিমালা অনুযায়ী কেন আপনাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হবে না- অভিযোগনামা পাওয়ার ১০ কার্যদিবসের মধ্যে জবাব দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে শুনানিতে ইচ্ছুক কী না- তাও জানানোর নির্দেশ দেয়া হয়। হাসপাতালের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা জানিয়েছেন- এ ঘটনার আগে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একাধিক বিতর্কিত ঘটনার জন্ম দিয়েছিল সাদেক। তবে তার বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। এর কারণ উল্লেখ করে তারা বলেন- নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের ভেতরে সাদেকের শক্তিশালী চক্র রয়েছে। এদের মাধ্যমে সে নার্সদের পদোন্নতি, ছুটিসহ নানা বিষয়ে টাকা কামাই করতো। এ কারণে সাদেকের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উত্থাপিত ওই অভিযোগগুলো নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা নিষ্পত্তি করে দিতেন। অধিদপ্তরে তার হাত থাকার কারণে ওসমানীর নার্স ও কর্মকর্তারা তার ভয়ে তটস্থ থাকতেন।

তারা জানিয়েছেন-সাদেক পলাতক থাকলেও হাসপাতালে থাকা তার চক্রের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে। ফের সে হাসপাতালে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চালাচ্ছে। একইসঙ্গে গ্রেপ্তার এড়িয়ে ফৌজদারি ও বিভাগীয় মামলা থেকে রেহাই পেতে তদ্বির চালিয়ে যাচ্ছে। সাদেকের বিরুদ্ধে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যে মামলা দায়ের করেছে সেটির তদন্ত করছেন কোতোয়ালি থানার এসআই রাশেদ ফজল। তিনি গতকাল মানবজমিনকে জানিয়েছেন- হাসপাতালে ঘুষ দুর্নীতির সময় হাতে-নাতে গ্রেপ্তার হওয়া ব্রাদার সুমন আদালত থেকে জামিন পেয়েছে। তবে সাদেক এখনো পলাতক রয়েছে। সাদেককে ধরতে তার বালুচরস্থ বাসা এবং সম্ভাব্য সকল স্থানে খোঁজা হচ্ছে। পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা অভিযানে আছেন। আশা করা যাচ্ছে খুব দ্রুতই ফলাফল মিলবে। তিনি জানান- ওসমানী কর্তৃপক্ষের দায়ের করা মামলার তদন্ত চলছে। নানা বিষয়ে তিনি তদন্ত কাজ চালাচ্ছেন। তদন্ত শেষ হলে আদালতে রিপোর্ট জমা দেবেন।