সিলেটে তাপমাত্রার সাথে বাড়ছে লোডশেডিং

সিলেটে তাপমাত্রার সাথে বাড়ছে লোডশেডিং

সিলেটে তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে লোডশেডিং। ঘন্টায় ঘন্টায় লোডশেডিংয়ের কারণে জনভোগান্তি চরমে। বিদ্যুত কর্তৃপক্ষের দেয়া লোডশেডিং তথ্যের সাথে বাস্তবতার বিশাল ফারাক লক্ষ্য করা যাচ্ছে। গরমে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে মানুষ। একে তো গরম এর ওপর লোডশেডিংয়ের কারণে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে। অতিমাত্রায় লোডশেডিংয়ে বাসা-বাড়ী, অফিস-ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে সকল স্থানে রীতিমত অস্থিরতা বিরাজ করছে। বিপাকে পড়েছেন শিশু ও অসুস্থ বয়স্কগণ।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড পিডিবি সিলেটের তথ্যমতে-দিনের বেলায় সিলেট বিভাগে ২০ শতাংশ এবং সিলেট জেলায় ২১ শতাংশ লোডশেডিং হয়েছে। কিন্ত বাস্তবে সকাল ১১টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নগরে বহু স্থানে অর্ধেক সময় বিদ্যুৎ ছিলো না। সাধারণ গ্রাহকের প্রশ্ন! জেলায় ২০ শতাংশ লোডশেডিং হলে বাকী বিদ্যুৎ গেল কই। আমরা তো দিনের অর্ধেক সময় বিদ্যুৎ পাইনি। সেই হিসাবে লোডশেডিং হতো ৫০ শতাংশ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দেশে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং বিভিন্ন জেলায় তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকায় বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েছে। কিন্তু সেই হারে বাড়ছেনা উৎপাদন, ফলে বিঘ্নিত হচ্ছে সরবরাহ। এই কারণে শুধু সিলেট নয়, সারাদেশেই লোডশেডিং বেড়েছে।

শহর বা গ্রাম সবজায়গায়ই প্রায় একই অবস্থা। তবে, শহরের চেয়ে গ্রামে লোডশেডিংয়ের মাত্রা বেশি। বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতার সাথে সঞ্চালন ক্ষমতা না বাড়ায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যাচ্ছে না- এমন দাবি বিদ্যুৎ বিভাগের। কিন্তু গ্রাহকদের প্রশ্ন, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের কথা বলে দফায় দফায় বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। কয়েক বছরের ব্যবধানে বিদ্যুৎ বিল তিন/চার গুণ পর্যন্ত বেড়েছে। কিন্তু বাস্তবে এর সুফল পাচ্ছে না বিদ্যুৎ গ্রাহকগণ। অথচ বিদ্যুৎ কেন্দ্র বসিয়ে রেখে ক্যাপাসিটি চার্জের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা গ্রাহকের পকেট থেকে চলে যাচ্ছে।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড পিডিবি সিলেট বিভাগীয় প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল কাদির জানান, গতকাল মঙ্গলবার বিকেল ৫টার পর সিলেট বিভাগে পিডিবি বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১৮৪ মেগাওয়াট। এর বিপরীতে সরবরাহ হয়েছে ১৬৫ মেগাওয়াট। ঘাটতি ছিল ১৯ মেগাওয়াট। ফলে বিভাগে ১০ শতাংশ লোডশেডিং হয়েছে।

এই সময়ে সিলেট জেলায় ১২১ মেগাওয়াট বিদ্যুত চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ হয়েছে ১০৫ মেগাওয়াট। ঘাটতি ছিল ১৫ মেগাওয়াট। ফলে জেলায় ১৩ শতাংশ লোডশেডিং হয়েছে। 

বিদ্যুত বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরো জানা গেছে, দিনভর বিকেল ৫টা পর্যন্ত সিলেট বিভাগে ১৯১ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ হয়েছে ১৫৪ মেগাওয়াট। ঘাটতি ছিল ৩৭ মেগাওয়াট। ফলে বিভাগে দিনের বেলায় ২০ শতাংশ লোডশেডিং হয়েছে।

এই সময়ে সিলেট জেলায় ১৪৭ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ হয় ১১৬ মেগাওয়াট। ঘাটতি ছিল ৩১ মেগাওয়াট। ফলে জেলায় লোডশেডিং হয়েছে ২১ শতাংশের বেশী। গরমের সাথে পাল্লা দিয়ে লোডশেডিং বাড়লেও সহসা এ থেকে মুক্তি মিলবেনা বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। গরমের কারণে প্রতিদিনই বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ছে। সেই হারে উৎপাদন না বাড়ায় লোডশেডিং আরো বাড়তে পারে বলে জানান তারা। তবে গরম কমলে লোডশেডিংয়ের মাত্রা কমতে পারে।

নগরীর সুবিদবাজারের বাসিন্দা মুজিব খান জানান, গরম একটু বাড়তে না বাড়তেই লোডশেডিং বেড়েছে কয়েকগুণ। এই গরমে বিদ্যুৎ ছাড়া ঘরে থাকা যায় না। বিদ্যুতের দাম দফায় দফায় বাড়ানো হলো। প্রিপেইড মিটার স্থাপনের পর থেকে এমনিতেই বিদ্যুৎ খরচ বেড়েছে। এরমধ্যে অতিমাত্রায় লোডশেডিংয়ে বাচ্চাদের নিয়ে বহুকষ্টে আছি। আমাদের দুর্ভোগ দেখার কেউ নাই।

জিন্দবাজারের ব্যবসায়ী কবির আহমদ জানান, এমনিতেই বন্যায় ঈদে তেমন ব্যবসা হয়নি। এখনো বন্যা প্লাবিত সিলেটের অধিকাংশ এলাকা। বন্যা পরিস্থিতি যখন কিছুটা উন্নতি হচ্ছে তখনই লোডশেডিংয়ের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। গরমে নিজেই দোকানে বসতে পারিনা। ক্রেতা আসবে কিভাবে?