আন্দোলনে সিলেটে ব্যবসায় ক্ষতি ১৫ হাজার কোটি টাকা
বন্যা ও অতিবৃষ্টিতে একদফা ক্ষতিগ্রস্থ সিলেটের মানুষ। ব্যবসা থেকে শুরু করে ফসলহানি, সব দিকেই কেবল ক্ষতির হিসাব। এমন অবস্থায় গত ১৫ জুলাই ফের শুরু হয় কোটা আন্দোলন। চলমান এই আন্দোলন ঘিরে বিস্ফোরণম্মুখ হয়ে ওঠে দেশ। সংঘর্ষ, সহিংসতায় তপ্ত হয়ে ওঠে সিলেটও।
গত বৃহস্পতিবার (১৯ জুলাই) ছাত্রদের ডাকা কমপ্লিট সাটডাউন ইস্যুতে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে নগরজুড়ে।দেশের সর্বত্র ধ্বংসাত্বক কার্যক্রম চলে।পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দেশজুড়ে কারফিউ জারি করা হয়। এ কারণে নির্বাহি আদেশে সরকারি-আধা সরকারি ও স্বায়ত্ব শাসিত প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক বন্ধ রাখা হয়। দেশের সঙ্গে প্রতিবেশি দেশের আমদানি রফতানির ওপর প্রভাব পড়ে। ফলে গত এক সপ্তাহ ধরে দোকানপাট বন্ধ রাখায় সব সেক্টরের ব্যবসায় ধস নামে। সেই সঙ্গে ইন্টারনেট সেবা বিঘ্নিত থাকায় অনলাইন প্লাটফার্মেও ব্যবসায়ীরা ক্ষতির সম্মুখীন হন। ধ্বস নামে পর্যটন ব্যবসায়ও।
পরিবহন বন্ধ থাকায়ে দেশের দক্ষিণাঞ্চল থেকে কাঁচামাল আমদানি বন্ধ হয়ে পড়ে। দামের প্রভাব পড়ে নিত্যপণ্যের বাজারে। তাতে নাভিশ্বাস ওঠে সাধারণ মানুষের। আয়হীন হয়ে পড়েন মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত ও খেটে খাওয়া মানুষ।
যদিও বর্তমানে কারফিউ শিথিল করা হয়। কিন্তু মানুষের মধ্যে আতঙ্ক কাটেনি এখনো। যানবাহন চলাচল সীমিত আকারে চলাচল করছে। নগর এলাকায় মার্কেট-বিপনীবিতান সীমিত আকারে খোলা রাখলেও নেই ক্রেতা। চরম ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হন সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে ব্যবসায়ীরাও।
চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলন স্বাভাবিক হয়ে আসলেও সিলেটে বিভিন্ন সেক্টরে ব্যবসায় অন্তত ১৫ হাজার কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে দাবি করেছেন সিলেটের ব্যবসায়ীরা নেতারা। তাদের মতে, সিলেটে পর্যটনখাতেই অন্তত ৫শ’ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি তাহমিন আহমদ বলেন, সিলেটে বিগত বন্যা ও অতিবৃষ্টিতে কৃষি ও ব্যবসাতে ব্যাপক ক্ষতিসাধন হয়েছে। এই রেশ কেটে ওঠার আগেই ছাত্রদের চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনে কেবল সিলেট নয়, সারা দেশ ক্ষতির মুখে পড়ে। তবে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীরা। সাধারণ মানুষের হাতে টাকা নেই, দোকানে বাকি কিনে খেতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, উদ্ভুত পরিস্থিতিতে সিলেট জেলার ক্ষয়ক্ষতি অন্তত ১৫ হাজার কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে সিলেটে ১৩ বর্ডার দিয়ে আমদানি রফতানি বন্ধ ছিল। কেবল পর্যটনে বন্যায় ৫শ’ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। কোটা আন্দোলনে জেলা থেকে মালবাহি ট্রাক আসছে। পথে ট্রাকেই অন্তত ৮/১০ কোটি টাকার মাল নষ্ট হয়েছে। মার্কেট-বিপনীবিতান থেকে শুরু করে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরাও দোকান বন্ধ রেখেছেন ঠিকই, কিন্তু কর্মচারিদের বেতন ঠিকই দিতে হবে, টাকা কোথায় পাবে। প্রান্তিক পর্যায় থেকে শুরু করে সব মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ। আর ইন্টারনেট বন্ধ, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে লেনদেন বন্ধ হয়ে পড়ায় অনলাইন প্লাটফর্মের ব্যবসায় অন্তত ৮ থেকে ১০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে, ধারণা করা হচ্ছে। এছাড়াও আমাদের ডলার সংকট, তারল্য সংকট রয়েছে।
এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় ব্যবসায়ীদের ঘুরে দাঁড়াতে সরকারি পৃষ্টপোষকতা প্রয়োজন মনে করেন এই ব্যবসায়ী নেতা। এখন প্রয়োজন সবকিছু লিবারেল করে দেওয়া, লাইনেন্স মওকুফ। বিশেষ করে এক বছরের জন্য ব্যবসায়ীদের ভ্যাট, ট্যাক্স ও লোন ইন্টারেস্ট মওকূফ করে দেওয়া প্রয়োজন। তবেই মানুষ ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন। কেননা, যেখানে সরকার নিজেই ক্ষতিগ্রস্থ, ফলে সরকারের ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে ব্যবসায়ীদের মাথায় বাড়ি মারা হবে।
সিলেট মহানগর ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান রিপন, ব্যবসায়ীদের ক্ষতি শুরু মে মাস থেকে বৃষ্টি বন্যায় আক্রান্ত হয়ে।এরমধ্যে কোটা আন্দোলনে কমপ্লিট সাটডাউন থেকে দোকানপাট বন্ধ। ২টি ধরে দোকানপাট খোলা হলেও ক্রেতা নেই। কারফিউ শিথিল করা হলেও মানুষের মধ্যে ভয়ভীতি কাজ করছে। কর্মচারিদের চালানো দায় হয়ে গেছে। আন্দোলনকারীরা ধাওয়া খেয়ে মার্কেট অলিগলি দিয়ে পালানোর সময় ব্যবসায়ীরা গুলিতে আহত হয়েছেন ৪/৫ জন।
তিনি বলেন, এমনি ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্থ, অথচ এই পরিস্থিতিতেও ভ্যাট অফিস থেকে ফোনে ব্যবসায়ীদের চাপ দেওয়া হচ্ছে। ব্যবসায়ী নেতা হিসেবে অন্তত এই মাসে কাউকে ডিস্ট্রার্ব করতে বারণ করেছি। বিশেষ করে বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার যে ঘটনা ঘটেছে, তাতে ক্ষতি হয়েছে বেশি ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষের। নগরে সাড়ে ৭ হাজার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। কর্মচারির বেতন, বিল পরেও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা আছেন লোনের চাপে। তাদের মাথার উপর কিস্তির খড়গ। এরমধ্যে এই আন্দোলনে ব্যবসায়ীরা অন্তত ৮/৯ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখী হয়েছেন দাবি করেন তিনি। বর্তমান পরিস্থিতিতে যাদের দেড়/দুই লাখ টাকা বিক্রি হতো, তারাও ১০ হাজার টাকা বিক্রি করতে পারছেন না। এছাড়া প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেটে জুলাই/আগস্টে বেশি প্রবাসীরা দেশে আসেন। কিন্তু এবার বৈরী পরিস্থিতির কারণে প্রবাসীরাও আসছেন না। এটাও ক্ষতির আরেকটি বড় কারণ। কেননা, এই অঞ্চলের মানুষের বড় একটি আয়ের অংশ প্রবাসীদের থেকে। তাদের রেমিটেন্স দেশের অর্থনীতির চাকাও সচল রাখে।