ওসমানী বিমানবন্দরে কার্গো ফ্লাইট চালু হচ্ছে আজ

অবশেষে দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সরাসরি কার্গো ফ্লাইট চালু হচ্ছে আজ। রোববার (২৭ এপ্রিল) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় প্রথমবারের মতো ৬০ টন গার্মেন্টস পণ্য নিয়ে কার্গো বিমানের একটি ফ্লাইট সিলেট থেকে উড়াল দেবে, যার মধ্য দিয়ে সিলেট থেকে ব্যবসা-বাণিজ্যের নতুন দ্বার উন্মোচিত হচ্ছে।
প্রথমবারের কার্গো ফ্লাইট চালু করতে ইতোমধ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে ওসমানী বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় কার্গো ফ্লাইটের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন।
সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। আগামী ১ ও ৪ মে আরও দুটি ফ্লাইট পরিচালনার কথা রয়েছে বলে একটি সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে, প্রথমবারের সিলেট থেকে কার্গো সার্ভিস চালু হওয়ায় সিলেটের ব্যবসায়ীদেরও ব্যবসা-বাণিজ্যের দুয়ার খুলছে। সিলেট দিয়ে পণ্য রপ্তানির সাথে সাথে আমদানিরও সুযোগ তৈরি হচ্ছে। একইসাথে ব্যবসা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন খাতেরও সার্বিক উন্নয়ন হবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।
তবে পণ্য রপ্তানীতে সিলেটের ব্যবসায়ীদের সম্পৃক্ত করতে হলে বিমানবন্দরে কোয়ারেন্টাইন সার্টিফিকেট, প্যাকেজিং ও পণ্য ফ্রিজিং ব্যবস্থা চালু করার দাবি জানিয়েছেন তারা।
সিলেট থেকে সরাসরি কার্গো ফ্লাইট চালু করার দীর্ঘ দিনের দাবি ছিল সিলেটের ব্যবসায়ীদের। চলতি মাসে বাংলাদেশের সঙ্গে ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে প্রতিবেশি রাষ্ট্র ভারত। এতে করে দেশ থেকে পণ্য রপ্তানীতে কিছুটা ছন্দ পতন ঘটে। তবে পণ্য রপ্তানীতে সংকট তৈরির আগে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে কার্গো সার্ভিস চালু করছে সরকার।
বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, সিলেট থেকে সরাসরি কার্গো ফ্লাইট চালু করতে কার্গো কমপ্লেক্স ও টার্মিনাল নির্মাণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে দক্ষ জনবল ও অত্যাধুনিক নিরাপত্তা যন্ত্রপাতি সংস্থাপন করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক মানের রেপিড স্ক্যানিং মেশিন থেকে শুরু করে সকল যন্ত্রাংশ স্থাপনের কাজও ইতোমধ্যে শেষ করা হয়েছে। এই মেশিনটি শুধুমাত্র সিলেট ও ঢাকা বিমানবন্দরে রয়েছে।
এছাড়াও জনবল নিয়োগ ও সংশ্লিষ্টদের প্রশিক্ষণ শেষ করা হয়েছে। তাছাড়া প্রথম ফ্লাইটে বিমানে মালামাল তোলার জন্য ঢাকা থেকে যেসব জনবল আসবে তাদের অনুমতিসহ বিমান সংশ্লিষ্ট সকল জনবলের অনুমতির কাজ শেষ হয়েছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ারভাইস মার্শাল মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া সিলেটের কার্গো টার্মিনালের নির্মাণাধীন প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল ভবন, এপ্রোন, প্রশাসনিক ভবন এবং কন্ট্রোল টাওয়ারের কার্যক্রম পরিদর্শন করেন। এসময় তিনি কার্গো টার্মিনাল এরিয়া ও সংশ্লিষ্ট মেশিনারিজ সরেজমিনে পরিদর্শন করেন এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দেন।
ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও এয়ারফ্রেইট বিভাগের সহকারী কমিশনার মো. ফিরোজ হোসেন বিশ্বাস বলেন, ‘সিলেট ওসমানী বিমানবন্দরে কার্গো ফ্লাইট চালু করতে আমরা দেড় বছর ধরে ট্রায়ালে ছিল। সব প্রস্তুতি শেষে আজ এটি উদ্বোধন হচ্ছে। টার্মিনালে যারা দায়িত্বে আছেন তারাই কার্গো সার্ভিসের কাজে সম্পৃক্ত থাকবেন। তবে কার্গো বিমানে মালামাল তোলার জন্য কিছু স্টাফ ঢাকা থেকে আসবে। এখান থেকে আমরা ১৮ জন নিয়োগ দিয়েছি।’
তিনি বলেন, ১২০টন ধারণ ক্ষমতার কার্গো বিমানের প্রথম ফ্লাইটে ৬০ টন গার্মেন্টস পণ্য নিয়ে উড্ডয়ন করবে। এটি ইউরোপের কোন দেশে অবতরণ করবে সেটা এখনও বলা যাচ্ছে না। ফ্লাইটটি জার্মানিতেও যাওয়ার কথা রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আগামী ১ ও ৪ মে আরও দুটি ফ্লাইট পরিচালনা করা হতে পারে। তবে এ বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না।
সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক মো. হাফিজ আহমদ বলেন, রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় সিলেট থেকে প্রথম কার্গো ফ্লাইট উড্ডয়ন হবে। এরইমধ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। জনবল নিয়োগ থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্টদের প্রশিক্ষণও ইতোমধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে। বিশেষ করে প্রথম ফ্লাইট হিসেবে সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়েছে।
এদিকে, সিলেট থেকে সরাসরি কার্গো ফ্লাইট চালু হওয়ায় ব্যবসা-বাণিজ্যের নতুন দ্বার উন্মোচিত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর সিলেট থেকে সরাসরি কার্গো সার্ভিস চালু হওয়ায় নতুন করে স্বপ্ন দেখছেন ব্যবসায়ীরা। তবে কার্গো ফ্লাইট যাতে বন্ধ না হয় সে ব্যাপারে সরকারের কাছে জোর দাবি জানান তারা।
সিলেটের আমদানি রপ্তানীকারক মো. আবুল কালাম বলেন, এটি সিলেটবাসীর জন্য অত্যন্ত আনন্দের খবর। এতে শুধু ব্যবসায়ীরা লাভবান হবে না, বিভিন্ন সেক্টরের মানুষের আয়ের পথ বাড়বে।
তিনি বলেন, সিলেটের ব্যবসায়ীরা কার্গো ফ্লাইটের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানী করা ছাড়াও আমদানীও করতে পারবেন। প্রথম কয়েক মাস হয়তো আমদানি করার পথ তৈরি হবে না। কিন্তু যেহেতু কার্গো ফ্লাইট সরাসরি সিলেটে আসবে, সে হিসেবে আমদানি করারও একটু ভালো সুযোগ রয়েছে। কার্গো ফ্লাইট চালুর পর যাতে বন্ধ করা না হয়- এই দাবি জানান তিনি।
সিলেট চেম্বার অব কমার্স ইন্ড্রাস্ট্রির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মুজিবুর রহমান বলেন, সিলেট থেকে গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানী করার সুযোগ নেই। সিলেটের ব্যবসায়ীরা কাঁচামাল রপ্তানী করার ভালো সুযোগ তৈরি হয়েছে। এই ফ্লাইট যাতে সব সময় চালু থাকে সে ব্যাপারে সরকারের নিকট জোর দাবি জানান তিনি।
একই সঙ্গে বিমানবন্দরে কোয়ারেন্টাইন সার্টিফিকেট, প্যাকেজিং ও পণ্য ফ্রিজিং ব্যবস্থা চালু করা গেলে সিলেটের ব্যবসায়ীরা সরাসরি সিলেট থেকে কার্গো ফ্লাইটের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানী করতে পারবেন বলেও জানান তিনি।