বাংলাদেশ নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করে তোপের মুখে লেবার পার্টির কিয়ার স্টারমার
ব্রিটেনের জাতীয় নির্বাচনের শেষ সপ্তাহে এসে আলোচনায় উঠে এসেছে বাংলাদেশের নাম। এমনকি অভিবাসী এলাকায় এখন ভোট ফ্যাক্টরের নাম বাংলাদেশ! লেবার নেতা স্যার কিয়ার স্টারমারের বেফাস মন্তব্যে অযাচিতভাবে বাংলাদেশের নাম ব্যবহার করার ফলে ক্ষোভে ফেটে পড়ছেন বাংলাদেশি কমিউনিটি।
দেশের প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টির নেতা কিয়ার স্টারমার অবৈধ অভিবাসী প্রসঙ্গে বাংলাদেশি অভিবাসীদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর উদাহরণ দিয়েছেন। নির্বাচন সামনে রেখে গত সোমবার ডেইলি সান আয়োজিত বিতর্ক অনুষ্ঠানে ওই উদাহরণ দেন তিনি।
এই মন্তব্যের পর সোমবার ও মঙ্গলবার ব্রিটেনের গণমাধ্যমে আলোচনায় ছিল এই সংবাদ। বাংলাদেশি কমিউনিটিতে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয়েছে। ক্ষোভের মুখে লেবারপার্টি ব্যাখ্যা দিতে বাধ্য হয়েছে। এমনকি অবৈধ অভিবাসী বিষয়ে বর্তমান সরকারের নীতি ‘রুয়ান্ডা পলিসিকে’ ব্যয়বহুল উল্লেখ করে ক্ষমতায় গেলে এই নীতি বাতিলের ঘোষণা দিয়েছেন স্টারমার।
বিতর্ক অনুষ্ঠানে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অবৈধ অভিবাসীদের রুয়ান্ডা না পাঠিয়ে তাদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ নেবে লেবার পার্টি। এ ক্ষেত্রে তিনি উদাহরণ হিসেবে বাংলাদেশের কথা উল্লেখ করে বলেন, যেমন অবৈধ বাংলাদেশিদের তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হবে।
অথচ ব্রিটেনে অবৈধ অভিবাসীদের তালিকায় বাংলাদেশ ৭ নাম্বারে। তার উপরে আছে ইরান, আফগানিস্থান, ভারত, পাকিস্থান, নাইজেরিয়ার নাম। বাকি দেশ রেখে শুধু বাংলাদেশের নাম নেতিবাচক ভাবে নেয়ায় লেবার পার্টির অন্ধ সমর্থক ব্রিটিশ বাংলাদেশিরা কষ্ট পেয়েছেন।
সোমবার দুপুরে টাওয়ার হ্যামলেটসের লেবার কাউন্সিলার ও দলের ডেপুটি লিডার সাবিনা ইয়াসমীন পদত্যাগ করেছেন। পপলার-লাইমহাউজের লেবার পার্টি প্রার্থী আপসানা বেগম কড়া সমালোচনা করেছেন নিজ দলের প্রধানের বিরুদ্ধে। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশি কমিউনিটি নিয়ে বাজে কথা সহ্য করা হবে না।
লেবার পার্টির অপর প্রভাবশালী এমপি রুশনারা আলীও বলেছেন, কিয়ার স্টারমার শুধু বাংলাদেশের নাম উল্লেখ করে যে শব্দ বলেছেন এটা ভুল! লেবার পার্টির নেতার একটি ভিডিও ক্লিপ প্রকাশের পর আমি যথেষ্ট উদ্বিগ্ন ও বিচলিত। আমি আমাদের কমিউনিটির এই উদ্বেগেরে বিষয়ে দলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ করছি।
বাংলাদেশি অধ্যুষিত বেথনাল গ্রিন ও স্টেপনি আসনের লেবার পার্টি মনোনীত প্রার্থী রুশনারা আলীর প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রার্থীরা স্টারমারের বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশি প্রচার করছেন। লেবার পার্টি বাংলাদেশিদের বিরুদ্ধে, তাই লেবার পার্টিকে ভোট না দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন তারা।
সাবেক এমপি ও ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা জর্জ গ্যালওয়ে লেবার পার্টির নেতা স্টারমারের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, স্টারমার বাংলাদেশিদের সম্পর্কে মন্তব্য করে নিজেই রাজনৈতিকভাবে আত্মহত্যা করেছেন। বাংলাদেশিদের সঙ্গে যা করা হয়েছে, তারপর বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কোনো আত্মসম্মানবোধসম্পন্ন ব্যক্তি স্টারমারের দলকে ভোট দিতে পারে না।
এই ঘটনার পর স্যার কিয়ার স্টারমার ব্রিটিশ গণমাধ্যমে তার ব্যাখা দিয়েছেন। তবে তিনি এই ঘটনাকে ভুল ভাবে ব্যাখ্যা দেয়া হচ্ছে বললেও ক্ষমা চাননি। তিনি বলেছেন, যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশিদের বিশাল অবদানের জন্য তিনি গর্বিত এবং তিনি যুক্তরাজ্যজুড়ে বাংলাদেশি কমিউনিটিকে সমর্থন করেছেন। কিন্তু ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ক্লিপটি এমনভাবে সম্পাদনা করা হয়েছে, যেন তিনি ব্রিটিশ বাংলাদেশিদের প্রত্যাবাসনের কথা বলছেন।
তিনি আরো বলেন, যুক্তরাজ্যে যাদের থাকার আইনগত অধিকার নেই, তাদের নিরাপদে দেশে ফিরিয়ে দেওয়া হবে। বাংলাদেশকে শুধু উদাহরণ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। কারণ, সম্প্রতি বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে এ–সংক্রান্ত একটি দ্বিপক্ষীয় চুক্তি সই হয়েছে। সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন