লেবাননকে ‘প্রস্তর যুগে’ পাঠানোর হুমকি ইসরাইলের
ক্রমেই উত্তেজনা বৃদ্ধি পাচ্ছে ইসরাইল এবং লেবাননের মধ্যে। সম্প্রতি লেবাননের ইরান-সমর্থিত সামরিক সংগঠন হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধ ঘোষণা করেছে ইসরাইল। এরই মধ্যে লেবাননে হামলা চালানোর অনুমোদন ও বৈধতা দিয়েছে দেশটির প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। তবে হিজবুল্লাহও ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নয়, তারাও পালটা আক্রমণের হুমকি দিয়েছে তেল আবিবকে।
এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট লেবাননকে ‘প্রস্তর যুগে’ পাঠানোর কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। কিন্তু এ ধরনের হুমকির বিরুদ্ধে ইসরাইলকে সতর্ক করল তাদের দুই মিত্র দেশ যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানি। এএফপি।
এর আগে এবং ইরান-সমর্থিত হিজবুল্লাহর মধ্যে আন্তঃসীমান্ত উত্তেজনা বেড়ে যাওয়ায়, গ্যালান্ট জোর দিয়েছিলেন যে ‘আমরা যুদ্ধ চাই না, তবে আমরা প্রতিটি পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি।’ তিনি আরও হুমকি দিয়ে বলেন, ‘হিজবুল্লাহ খুব ভালোভাবে বুঝতে পারে যে যুদ্ধ শুরু হলে আমরা লেবাননে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করতে পারি।’
যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানি ইসরাইলের এ পরিকল্পনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বার্লিন ও ওয়াশিংটন জানিয়েছে, যুদ্ধ আরও প্রসারিত হলে, তার ফল কী হবে, তা নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন। মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব লয়েড অস্টিন ওয়াশিংটনে ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর বলেছেন, ইসরাইল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে আরেকটি যুদ্ধ মানে তা আঞ্চলিক যুদ্ধের আকার নেবে। কূটনৈতিক পথেই এই উত্তেজনা কমাতে হবে। এরই মধ্যে জার্মানির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সব জার্মান নাগরিককে লেবানন ছেড়ে চলে যাওয়ার অনুরোধ করেছে।
বুধবার তারা জানিয়েছে, ইসরাইল ও লেবাননের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ছে। পশ্চিমা দেশগুলোর নাগরিকদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী আক্রমণের সম্ভাবনাও বাড়ছে। তাই মন্ত্রণালয় সব জার্মান নাগরিককে সতর্ক করে দিচ্ছে।
এমনকি জাতিসংঘের মানবাধিকার সংক্রান্ত বিষয়ে সবচেয়ে সিনিয়র কর্মকর্তা মার্টিন গ্রিফিথস বলেছেন, ‘যুদ্ধের পরিধি ও তীব্রতা বাড়লে তার ফল মারাত্মক হবে। আমি এটাকে ফ্ল্যাশ পয়েন্ট হিসাবে দেখছি।’
অন্যদিকে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান এক বিবৃতিতে বলেছেন, ইসরাইল যদি লেবাননে হামলা চালায়, তাহলে পুরো মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ ছড়াবে। ইসরাইলি প্রেসিডেন্ট নেতানিয়াহুর পরিকল্পনা বড় বিপর্যয় ডেকে আনবে। আর পশ্চিমা বিশ্ব যেভাবে ইসরাইলকে সমর্থন করছে, সেটাও দুঃখজনক। লেবানন ও সে দেশের মানুষের পাশে দাঁড়াবে তুরস্ক। আমি ওই অঞ্চলের সব দেশের কাছে আবেদন করছি, তারাও যেন লেবাননের পাশে দাঁড়ায়। আবার বুধবার আলজাজিরার খবরে বলা হয়েছে, ইসরাইলের সঙ্গে যুদ্ধ করতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছে লেবাননে আশ্রয় নেওয়া ফিলিস্তিনিরা। যদি ইসরাইল লেবাননে হিজবুল্লাহর ওপর সর্বাত্মক হামলা চালায় তাহলে ইসরাইলি বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে প্রস্তুত রয়েছেন তারা।
গাজায় ইসরাইলের আক্রমণ ও বর্বরতাকে শুরু থেকেই প্রবল ক্ষোভের সাথে দেখেছে লেবাননের ফিলিস্তিনিরা। তাদের বিশ্বাস, ইসরাইল যদি হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধ চালায় তবে একই পরিণতির ইসরাইলকেও ভোগ করতে হবে। লেবাননের বৈরুতে শাতিলা ফিলিস্তিনি শরণার্থী শিবিরে প্রতিরোধ আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত অনেকেই আলজাজিরাকে জানিয়েছেন, এই উত্তেজনা এবং যুদ্ধের খবরে তারা ভীত নন।
এই অঞ্চলে হিজবুল্লাহকে সমর্থন করার জন্য ইসরাইলের বিরুদ্ধে লড়াই করবেন তারা। কিন্তু তাদের একটাই শঙ্কা, তাদের পরিবার এবং বেসামরিক নাগরিকদের জন্য। তাদের উদ্বেগ ইসরাইলের সঙ্গে হিজবুল্লাহর যুদ্ধ শুরু হলে ইসরাইল ইচ্ছাকৃতভাবে লেবাননের ঘনবসতিপূর্ণ আবাসিক এলাকাগুলোকে বিশেষ করে লেবাননে ফিলিস্তিনি শিবিরগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করবে। যেখানে কয়েক লাখ ফিলিস্তিনি বাস করে। তবে হুমকি দিলেও হিজবুল্লাহর শক্তি ও অস্ত্রের বিবেচনায় ইসরাইল লেবাননের বিরুদ্ধে বৃহত্তর যুদ্ধ শুরু করবে না বলে মনে করছেন অনেকেই।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হিজবুল্লাহর অস্ত্রাগারে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র, ইরান-নির্মিত ক্ষেপণাস্ত্র এবং অত্যাধুনিক ড্রোন রয়েছে যা ইসরাইলি সংঘাতকে গুরুতরভাবে বাড়ানো থেকে বিরত রাখছে। উল্লেখ্য, প্রায় আড়াই লাখ ফিলিস্তিনি লেবাননজুড়ে ১২টি শরণার্থী শিবিরে বাস করে।