সিলেটে গুলিবিদ্ধ রাইয়ানকে নিতে হবে ইউকে বা সিঙ্গাপুরে
আওয়ামী সরকারের পতন ও শেখ হাসিনার দেশত্যাগের খবরের পর গত ৫ আগস্ট ছাত্রজনতা মিলে বিজয় উল্লাস করছিল সিলেটের দক্ষিণ সুরমা থানার সামনে। সেখানে মাথায় গুলিবিদ্ধ হয় দক্ষিণ সুরমার সিলাম ইউনিয়নের ডালিপাড়া গ্রামের নানু মিয়া ও রুনু বেগমের ছোট ছেলে রাইয়ান আহমদ (১৬)। ১৭দিন পর ঢাকার নিউরো সায়েন্স হাসপাতালে জ্ঞান ফিরেছে রাইয়ানের। তবে জ্ঞান ফিরলেও তার শারীরিক অবস্থা এখনো সংকটাপন্ন। চিকিৎসকরা বলছেন তার উন্নত চিকিৎসার জন্য ইউকে বা সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়া প্রয়োজন।
ছোট ভাই সম্পর্কে এই তথ্য জানিয়েছেন আইমান আহমদ।
আইমান আহমদ বলেন, গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল সে। সেখানে ১৪দিন চিকিৎসা নিয়েও তার জ্ঞান ফিরেনি। সিলেটের চিকিৎসকরা তাকে ঢাকার নিউরো সায়েন্স হাসপাতালে রেফার করেন। সিলেটের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী নিজে এসে ঢাকায় হাসপাতালে ভর্তি করান আমার ভাইকে। এখন সে ন্যাশনাল নিউরো সায়েন্স হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে। গত শুক্রবার বার তার জ্ঞান ফিরেছে। এখন শুধু চোখ খুলে তাকাতে পারে। আমাদের সবাইকে চেনতে পারছে বুঝা যায়। মাঝে মাঝে আস্তে আস্তে বলে তার মাথায় খুব যন্ত্রণা করে। তাকে অপারেশন করতে তাকে ইউকে নেওয়া লাগবে। গুলি না বের করলে সে সুস্থ হবে না। এখানের ডাক্তাররা বলছেন যদি পারেন আপনারা দেশের বাইরে নিয়ে যান।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন ও ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের দিনে সারা দেশের ন্যায় সিলেটেও অনেক ছাত্র জনতা গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এই গুলিতে সিলেটের অনেকই গুরুত্বর আহত হয়েছেন। তবে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বর অবস্থা দক্ষিণ সুরমার সিলাম ইউনিয়নের ডালিপাড়া গ্রামের দশম শ্রেণির ছাত্র রাইয়ান আহমদের। গত ৫ আগস্ট ছাত্রজনতা মিলে বিজয় উল্লাস করছিল সিলেটের দক্ষিণ সুরমা থানার সামনে গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর ১২ দিন সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেয় সে। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে গত শনিবার (১৭ আগস্ট) সকালে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে ঢাকায় পাঠানোর ব্যবস্থা করেন সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরী। আরিফুল হক নিজেই ঢাকায় অবস্থান করে রাইয়ানকে নিউরো সায়েন্স হাসপাতালে ভর্তি করান।
জানা যায়, সিলেটের দক্ষিণ সুরমার সিলাম ইউনিয়নের ডালিপাড়া গ্রামের নানু মিয়া ও রুনু বেগমের দুই মেয়ে দুই ছেলে মিলে ছয় জনের সংসার। রাইয়ানের বড় বোন নাদিয়া বেগম অনার্স ও নাজিয়া বেগম ডিগ্রি অধ্যয়নরত। তার বড় ভাই আইমান আহমদ এইচএসসি ১ম বর্ষে পড়েন ও আহত রাইয়ান আহমদ সিলাম পিএল বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র। সিলামের ডালিপাড়ার বাড়িতে এখন কেউ নেই। রাইয়ানের চিকিৎসার জন্য স্বপরিবারে ঢাকায় চলে গিয়েছেন তারা। সেখানে হাসপাতালের পাশের এলাকায় ছোট একটি বাসা ভাড়া নিয়েছেন।
রাইয়ানের বড় ভাই আইমান আহমদ বলেন, আমার বাবা সিলেট নগরীর জিন্দাবাজার এলাকার রাজা ম্যানশনের একটি লাইব্রেরিতে কর্মচারীর কাজ করেন। আমরা ভাই বোন সবাই লেখাপড়া করছি। তিনিই আমাদের সংসার চালান। এখন তিনিও আমাদের সাথে ঢাকায় আছেন। ঠিক নাই কতদিন ঢাকা থাকা লাগবে। বাইরে চিকিৎসা নেওয়ার আগে পর্যন্ত তো এখানে থাকতেই হবে। এখন কোনোভাবে আল্লাহ চালাইতাছেন আমাদের। অনেকেই আমাদের কিছু আর্থিক সাহায্য করেছেন। চিকিৎসা খরচ সব সরকারিভাবে দেওয়া হচ্ছে।
চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরের ব্যবস্থার নিয়ে রাইয়ানের খালাত ভাই মুজিবুর রহমান বলেন, রাইয়ানের মাথার পিছনের দিক দিয়ে গুলি ব্রেইনের ভিতর রক্ত শিরার মধ্যে গিয়ে ফেঁসে গেছে। এখানে নিউরো সায়েন্সের ডাক্তাররা বোর্ড বসিয়ে বলেছেন অপারেশন লাগবে কিন্তু আমাদের দেশে হাই ফিকুয়েন্সি কোনো মেশিন নেই। আর এই অপারেশন মেশিনের মাধ্যমে না করলে তার ব্লিডিং থামানো যাবে না। ব্লিডিং থামানো না গেলে অপারেশনের সময় সে মারা যাবে । এই অপারেশন ইন্ডিয়াতে হবে না কারণ ইন্ডিয়াতেও হাই ফিকুয়েন্সি মেশিন নাই। ইউকে না হয় সিঙ্গাপুর এই অপারেশন করতে হবে। ঢাকা ভার্সিটির শিক্ষার্থীরা আসছিলেন রাইয়ানের খোঁজ খবর নিতে। আমরা এখন কাগজপত্র তাদের কাছে জমা দিয়েছি। গতকাল ডাক্তাররা সব দেখে সামারি দিয়েছেন। মন্ত্রণালয়ে কাগজ জমা হয়েছে। তাকে ইউকে নেওয়ার প্রসেসিং চলে। মনে হয় সরকারি ভাবে করা হবে। আমরা এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানি না। ঢাকা ভার্সিটির শিক্ষার্থীরা আশ্বাস দিয়েছেন তারা ইউকে যাওয়ার ব্যবস্থা করবে বলে । এখানেও তার সব্বোচ্চ চিকিৎসা হচ্ছে। বিদেশে পাঠানেরও চেষ্টা করা হচ্ছে। সে আস্তে আস্তে একটু কথা বলতে পারে। মুখ দিয়ে কিচ্ছু খেতে পারে না। নাকে নল দিয়ে খাওয়ানো হয়। মাথায় খুব যন্ত্রণা করে এটা সে বলতে পারে।