ফুঁসে উঠেছে সুনামগঞ্জের নদ-নদীর পানি, ঢুকছে হাওরে
ফুঁসে উঠেছে সুনামগঞ্জের নদ-নদীর পানি। পাহাড়ি ঢলে সব নদী পানিতে টইটম্বুর। ছুঁইছুঁই করছে বিপদসীমা। পানি ঢুকতে শুরু করেছে দুয়েকটি হাওরেও। ফলে মাছের বিচরণক্ষেত্র হাওরের এই অবস্থায় শঙ্কিত হাওরপারের বাসিন্দারা।
সুনামগঞ্জ জেলার বৃহৎ হাওর শনি ও মাটিয়ানে সোমবার (৩ জুন) পর্যন্ত বর্ষার রূপ দেখা যায়নি। এসব হাওরে নৌকা চলাচল শুরু হয়নি এখনও। মাটিয়ান হাওর দিয়ে যাওয়া সাবমারসিবল সড়ক দিয়ে রোববারও যানবাহন চলাচল করেছে। বৌলাই নদীর তাহিরপুর বাজারের উল্টোদিকে মাটির বস্তা দিয়ে বাঁধ দিয়ে পানি আটকানো হয়েছে। এতে মাটিয়ান হাওরে পানি প্রবেশ করছে না। শনির হাওরের ফসলি জমিতে রবিবারও ধানের নিচের অংশ (ঢেঙ্গা) দেখা গেছে। একদিকে ফুলে আছে নদীর পানি, অন্যদিকে হাওর প্রায় খালি।
তাহিরপুরের আমিনুল ইসলাম বলেন, হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের কোনো কোনো অংশ নৌ চলাচলের জন্য কেটে দিতে হবে। না হলে ১০ কিলোমিটারের নৌপথ ৩০ কিলোমিটার ঘুরে যেতে হবে। তাহিরপুর থেকে মধ্যনগর যেতে বহুপথ ঘুরে সোমবারও যেতে হয়েছে। অথচ বাঁধের কিছু অংশ কেটে দিলে অর্ধেকেরও কম সময়ে তাহিরপুর থেকে মধ্যনগর যাওয়া সম্ভব।
মৎস্য বিভাগের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, পানি যে বছর বিলম্বে এসেছে, হাওরে মাছের উৎপাদনও ওই বছর কমেছে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শামছুল আলম জানান, গেল পাঁচ বছরের মধ্যে ২০২১ ও ২০২৩ সালে এক মাসেরও বেশি বিলম্বে এসেছিল পানি। এ কারণে জেলায় ২০২১ সালে মাছ উৎপাদন কমে হয়েছিল ৩৫ হাজার টন, একই কারণে ২০২৩ সালে সবচেয়ে কম ৩৪ হাজার টন মাছ উৎপাদন হয়েছে। অন্যদিকে ২০২২ সালে জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময়ে জেলার সব হাওর পানিতে ভেসে যাওয়ায় পাঁচ বছরের মধ্যে ওই বছরই সবচেয়ে বেশি ৩৮ হাজার টন মাছ উৎপাদন হয়েছিল। এবারও নির্ধারিত সময়ের এক মাসের বেশি সময় পার হলেও হাওরে জলজ প্রাণী বিচরণেরই সুযোগ পাচ্ছে না। প্রজননের জন্যও পানি পাচ্ছে না মাছ।
জামালগঞ্জ উপজেলার ভারপ্রাপ্ত মৎস্য কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. কামরুল হাসান বললেন, হাওরে পর্যাপ্ত পানি না আসায় মাছের প্রজনন ব্যাহত হচ্ছে। পাহাড়ি ঢলের স্রোতে প্রাকৃতিকভাবে মাছের প্রজনন হয়। সঠিক সময়ে পর্যাপ্ত পানি না আসায় মাছের প্রজনন কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ কারণে হাওরে মাছের অভাব দেখা দিতে পারে। এ ছাড়া পানির সঙ্গে জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণীর সম্পর্ক রয়েছে। তিনটি উপাদান মিলেই মাছের বংশবৃদ্ধি হয়। ব্যাঙ, কুঁচে, বিষহীন সাপ, কচ্ছপজাতীয় প্রাণীর জন্যও সময়মতো পানি প্রয়োজন হয়।
তবে রোববার সন্ধ্যা থেকে সোমবার ভোর পর্যন্ত ভারী বৃষ্টিপাতে পাহাড়ি ঢলের পানিতে নদ-নদী উপচে পড়তে শুরু করেছে। সোমবার ভোর থেকে শক্তিয়ারখলা ১০০ মিটার সড়কটি পানির নিচে যেতে শুরু করেছে।