চীনের পাল্টা শুল্কারোপে মার্কিন শেয়ার বাজারে ধস

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কের বিরুদ্ধে চীন পাল্টা শুল্কারোপের ঘোষণা দেয়ার পরে যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ার বাজারে অস্থিরতা আরো তীব্র হয়ে উঠেছে। ফলে বাণিজ্য যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হওয়ার ও বিশ্ব অর্থনীতির ক্ষতির সম্ভাবনা বেড়েছে।
শুক্রবার (৪ এপ্রিল) যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি প্রধান স্টক সূচকই ৫ শতাংশেরও বেশি হ্রাস পেয়েছে। ডাও জোনস ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যাভারেজ দুই হাজার ২৩১ পয়েন্ট বা ৫.৫ শতাংশ কমে গেছে। এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক কমেছে ৫.৯৭ শতাংশ। তাছাড়া নাসডাক কম্পোজিটের শেয়ার ৫.৮২ শতাংশ পড়ে গেছে। ২০২০ সালের পর থেকে এ সপ্তাহটিকে মার্কিন শেয়ার বাজারের জন্য সবচেয়ে খারাপ সপ্তাহ বলে মনে করা হচ্ছে।
ট্রাম্প বিশ্ব বাণিজ্য ব্যবস্থা পুনর্গঠনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। শেয়ার বাজারের ধস নামার উদ্বেগ তিনি উড়িয়ে দিয়ে বলেছিলেন, মার্কিন শ্রমবাজার শক্তিশালী। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার অনুসারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ধৈর্য ধরুন। আমরা হারতে পারি না।’
ট্রাম্প প্রতিটি দেশের পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ নতুন আমদানি কর আরোপের ঘোষণা দেয়ার পর থেকে বিশ্বব্যাপী শেয়ার বাজার ট্রিলিয়ন ডলারের মূল্য হারিয়েছে। চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ভিয়েতনামের মতো গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক অংশীদারসহ কয়েক ডজন দেশের পণ্যগুলো উচ্চহারের সম্মুখীন হচ্ছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ১৯৬৮ সালের পর যুক্তরাষ্ট্রে এটিই সবচেয়ে বড় কর বৃদ্ধি। তারা আশঙ্কা করছেন, এই পদক্ষেপের ফলে বাণিজ্য সংকোচন হবে এবং অনেক দেশকে এটি অর্থনৈতিক মন্দার দিকে ঠেলে দিতে পারে।
চীন শুক্রবার ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়ায় মার্কিন পণ্যের উপর ৩৪ শতাংশ আমদানি কর আরোপ করেছে, গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পদার্থের রফতানি রোধ করেছে এবং মার্কিন সংস্থাগুলোকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে। ট্রাম্পের পদক্ষেপকে ’হয়রানি’ এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নিয়ম লঙ্ঘন বলে অভিহিত করেছে চীন।
হোয়াইট হাউসের আলোচনার আগ্রহ সম্পর্কে পরস্পরবিরোধী ইঙ্গিত সত্ত্বেও অন্য দেশগুলো আশা করছে তারা চুক্তি নিয়ে আলোচনা করতে সক্ষম হবে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাণিজ্য কমিশনার মারোস শেফকোভিচ শুক্রবার বলেছেন, তিনি মার্কিন কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময় করেছেন এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, বাণিজ্য সম্পর্কের জন্য ‘নতুন পদ্ধতির’ প্রয়োজন।
বিনিয়োগকারীরা আশঙ্কা করছেন, বাণিজ্য যুদ্ধের নাটকীয় বৃদ্ধি যুক্তরাষ্ট্র ও বিশ্ব অর্থনীতিকে মন্দার দিকে ঠেলে দিতে পারে। জেপি মরগান বিশ্লেষকরা বৃহস্পতিবার বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি ও বিশ্ব অর্থনীতি উভয়েরই এই বছর মন্দার দিকে যাওয়ার সম্ভাবনা ৬০ শতাংশ। বিশ্লেষকরা আরো বলেছেন, দেশগুলো যদি যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে শুরু করে তাহলে মন্দার সম্ভাবনা আরো বৃদ্ধি পাবে। প্রতিশোধ আরো বৃদ্ধির ঝুঁকি বাড়াবে এবং আলোচনার সম্ভাবনা হ্রাস করতে পারে।
সূত্র : বিবিসি, সিএনএন