বন্যার শঙ্কা কাটিয়ে স্বস্তিতে সুনামগঞ্জবাসী

বন্যার শঙ্কা কাটিয়ে স্বস্তিতে সুনামগঞ্জবাসী

গত তিনদিন বৃষ্টি না হওয়ায় পাহাড়ি ঢলের পানি কমে প্লাবন পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। হাওড় ও নদীর পানি কমছে। সীমান্তনদী পাটলাই যাদুকাটা, চলতি চেলা, সোনালি চেলা ও খাসিয়া মারা নদীর পাহাড়ি ঢলের পানি প্রবাহ হ্রাস পেয়েছে। ফলে বন্যার শঙ্কা কাটিয়ে স্বস্তিতে আছে সুনামগঞ্জবাসী। ঝলমলে আবহাওয়া বিরাজ করায় শ্রমজীবীরা স্বাভাবিক কাজে ফিরে গেছেন। তবে রোদের তাপে কিছুটা অস্বস্তি মেনেই কাজ করছেন তারা।

২০২২ সালের ভয়াবহ বন্যার কথা ভেবে আজও আতঙ্কিত হয় সুনামগঞ্জের মানুষ। ফলে হাওড়ে একটু পানির চাপ বৃদ্ধি পেলেই পুরনো ক্ষতচিহ্ন মনেপড়ে। তবে এবার পাহাড়ি ঢলের পানি প্রবাহ হ্রাস পাওয়ায় হাওড়ের পরিস্থিতি নিয়ে স্বস্তিতে আছেন বাসিন্দারা।

সদর উপজেলার ইসলামপুর গ্রামের কৃষক তাজুল ইসলাম বলেন, ‘গত চার দিনে দেড়-দুই হাত পানি কমেছে। হাওড়ে পানি বৃদ্ধি পেলে আমরা ২২ সালের ভয়াবহ বন্যার কথা ভেবে আতঙ্কিত হই। চার দিনের কড়া রোদে এখন দুশ্চিন্তা কেটেছে।’

একই গ্রামের ফারুক মিয়া বলেন, ‘দুই-আড়াই মাস হাওড়ে পানি ছিল না। ১০-১৫ দিন হয় পানি আসছে। এখন আমাদের সুবিধা হয়েছে। নৌকা দিয়ে বাজার হাটে যেতে পারবো।’

গোয়াচূরা গ্রামের আব্দুল লতিফ বলেন, ‘পানি বাড়তির সময় বাড়ির ৫-৬ হাত পরিমাণ পানি ছিল।’

জেলে রসিদ মিয়া বলেন, ‘পানি না হলে হাওড়ে মাছ হয় না, ধানচাল নৌকা দিয়ে হাটবাজারে বিক্রির জন্য নিয়ে যাওয়া যায় না। হাওড়ে পানি প্রবেশ করায় এখন সুবিধা হইছে।’

শহরের এইচ এমপি উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র নাহিদ বলেন, ‘শহরের ছেলেরা হাওড়ের বিভিন্ন অংশের ভিডিও করে ফেসবুকে পোস্ট করে। এতে গ্রামের মানুষকে আরও আতঙ্কে ফেলা হয়। কারণ এখনো হাওড় পুরোপুরি পানিতে ভরে ওঠেনি।’

বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা পরিষদের নব নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম তালুকদার বলেন, ‘হাওড়ের পানি সড়ক থেকে দুই তিন হাত নিচে। কোনো ঘরবাড়িতে পানি ওঠেনি। চারদিন ধরে কড়া রোদ। ফলে আপাতত বন্যার কোনো আশঙ্কা নেই।’

সুনামগঞ্জ সদর, বিশ্বম্ভরপুর, দোয়ারাবাজার, ছাতক ও তাহিরপুর- এ ৫টি সীমান্ত উপজেলার লোকজন এখন স্বস্তির নিশ্বাস ফেলছেন। ৬ ও ৭ জুন সুনামগঞ্জে বৃষ্টি না হওয়ার জনজীবন স্বাভাবিক হয়ে ওঠেছে। গেল তিনদিন রোদ ঝলমলে আবহাওয়া বিরাজ করায় শ্রমজীবীরা স্বাভাবিক কাজে ফিরে গেছেন। তবে রোদে তাপে কিছুটা অস্বস্তি মেনেই কাজ করছেন তারা।

এদিকে সুরমা, চলতি ও যাদুকাটাসহ জেলার ২৬টি নদীর পানি বিপৎসীমার অনেক নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এখন ছোটবড় ১৩৭টি হাওড়ের স্বাভাবিক পানিতে ভরে ওঠেছে। জেলার হাওড়গুলো প্রতিবছর জুন থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত ৭ মাস পানিতে ডুবে থাকে। এটি হাওড়ের প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য।

পানি উন্নয়ন বোর্ডে নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, ‘বৃষ্টি না হওয়ায় নদীর পানি কমেছে। এখন রোদ ওঠেছে। আর বৃষ্টি না হওয়ায় পাহাড়ের ঢলের পানি কমে প্লাবন পরিস্থিতিরও উন্নতি হয়েছে।’