সিলেটে ৩ ঘন্টার রেকর্ড বৃষ্টিতে নগরজুড়ে জলাবদ্ধতা
আবারো জলাবদ্ধতার কবলে পড়লো সিলেট নগর। তিন ঘন্টার টানা ভারি বর্ষণে নগরজুড়ে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা।যেনো পুরো নগর জলমগ্ন হয়ে পড়ে। রাস্তাঘাট ডুবে ড্রেনের পানিতে একাকার হয়ে যায়। বাসাবাড়িতে ওঠেছে ময়লা পানি। হাসপাতালে পানি ডুকে ব্যাহত হয়েছে চিকিৎসা সেবা।
সিলেটে চিকিৎসা সেবার সর্ববৃহৎ প্রতিষ্ঠান এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও কলেজেও জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এতে মধ্য রাতে চরম দুর্ভোগে পড়েন নগরবাসী।
শনিবার (০৮ জুন) সন্ধ্যা রাত ৮টা থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি হয়। এরপর রাত ৯টা থেকে ১২টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টা ভারি বর্ষণ হয় সিলেটে। এই সময়ে ২২০ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করেছে সিলেট আবহাওয়া অফিস।
আবহাওয়া অধিদপ্তর সিলেটের আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজীব হোসাইন এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, শনিবার (৯ জুন) রাত ৯টা থেকে ১২টা পর্যন্ত ২২০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এটি এই মৌসুমের রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টি।
উজানে ভারতের ঢলে ও ভারি বর্ষণে সিলেটে নদ নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে নগরেও অকাল বন্যা দেখা দেয়। বাসা-বাড়িতে পানি ওঠে অন্তত; নগরীতেই চার সহস্রাধিক বাসিন্দা বন্যা আক্রান্ত হন। ত্রিশের অধিক পরিবার আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান করেন। এ অবস্থায় শুক্রবার পর্যন্ত সুরমার পানি বিপৎসীমার নীচে অবস্থান করছিল। নগর থেকে পানি ধীরে ধীরে নামতে শুরু করে। আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রিত মানুষজন নীড়ে ফিরতে শুরু করেন। কিন্তু শনিবার রাতের বৃষ্টিতে আবারো জলাবদ্ধতার কবলে পড়ে নগরের অধিকাংশ এলাকা।
ভারি বর্ষণে একে একে ডুবতে শুরু করে নগরের বিভিন্ন এলাকা। এমনকি প্রধান প্রধান সড়কগুলো যেনো এক একটি ছড়াখালে পরিণত হয়। ফলে দুর্ভোগে পড়েন বাসিন্দারা। বিশেষ করে নগরের অভিজাত এলাকা খ্যাত শাহজালাল উপশহরে বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। যার পূণরাবৃত্তি ঘটে শনিবার রাতেও। এলাকার বাসিন্দাদের অনেকে বলেন, অসংখ্য বাসার ভেতরে নীচ তলায় পানি ওঠে এবং সড়কগুলো ডুবে গিয়ে জলজটে পড়তে হয়। বাসা-বাড়ির নীচে সেফটি ট্যাঙ্কে পানি ওঠে খাবার পানির সংকট দেখা দিয়েছে।
এছাড়া নগরের মীরাবাজার, যতরপুর, আগপাড়া, সোনারপাড়া, শিবগঞ্জ, সোবহানীঘাট, তেররতন, মেন্দিবাগ , ছড়ারপাড়, মাছিমপুর, দরগা মহল্লা, পায়রা, জালালাবাদ, চৌহাট্টা, মিরবক্সটুলা, তালতলা, জামতলা, মনিপুরী রাজবাড়ি, মিরের ময়দান, বাগবাড়িসহ বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয় ভারি বর্ষণে।
স্থানীয়রা জানান, ভারী বর্ষণ শুরুর ঘন্টা দেড়েকের মধ্যে বেশিরভাগ এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। অনেক এলাকায় প্রথমে সড়ক ডুবে যায়। এরপর বাড়ি ঘরে পানি উঠতে শুরু করে। কোথাও কোথাও ড্রেন ভর্তি হয়ে রাস্তা দিয়ে পানি ছুটতে দেখা গেছে।
যতরপুরের বাসিন্দা সুমন আহমদ বলেন, সাম্প্রতিক বন্যায়ও যতরপুর এলাকা প্লাবিত হয়ে অনেক লোকজন আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান নেন। শুক্রবার পর্যন্ত পানি কমে যাওয়াতে অনেকে বাসা বাড়িতে ফিরতে শুরু করেন। কিন্তু শনিবার রাতে ৩ ঘন্টার বৃষ্টিতে আবারো জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় আশ্রয় কেন্দ্র ছেড়ে আসা লোকজন ফের বাসা-বাড়ি ছাড়তে হচ্ছে। এছাড়া যতরপুর ও লাগুয়া উপশহর এলাকার ভাড়াটিয়াদের অনেকে বাসা-বাড়ি ছাড়তে শুরু করেছেন।
সিলেট নগরের কেওয়াপাড়ার বাসিন্দা আব্দুল কাদির, মীরের ময়দানের বাসিন্দা আজমল আলী বলেন, ‘রাত ১০টার দিকেই পাড়ার রাস্তাগুলো ডুবে যায়। এরপর প্রায় তিন ফুটের মতো পানি উঠে গেলে বাসায় পানি উঠে যায়।
মীরের ময়দানের বাসিন্দা বাসিন্দা আরিফুল ইসলাম বলেন, হঠাৎ করে রাত সাড়ে এগারোটার দিকে ঘরে পানি ঢুকতে শুরু করে। কিছুক্ষণের মধ্যে ঘরে হাটু পানিতে ডুবে যায়। আসবাবপত্র কোনো কিছুই রক্ষা করতে পারিনি।
শিবগঞ্জ সোনারপাড়া এলাকার বাসিন্দা আনসার মিয়া বলেন, খাঁরপাড়া, সোনারপাড়া এলাকা, দর্জিপাড়া ও আশপাশের এলাকায় পাড়ার সড়কগুলোতে হাটু পানি মাড়িয়ে চলাচল করতে হয়েছে।অনেকের বাসা বাড়িতে পানি ঢুকে যায়।
সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ডাঃ আসাদুজ্জামান জুয়েল জানান, রাতে হাসপাতালের নিচতলায় পানি ঢুকে পড়েছে বলে জানতে পেরেছেন। তাৎক্ষণিকভাবে রোগীদের বিকল্প ওয়ার্ডে একিভূত করে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হচ্ছে।
এর আগে গত ২৯ মে এক রাতের ঢলে তলিয়ে গিয়েছিলো সিলেটের পাঁচ উপজেলা।পুরো জেলায় দেখা দিয়েছিলো বন্যা পরিস্থিতি। তবে কয়েকদিন ধরেই কমছিলো পানি। শনিবার জেলায় কুশিয়ারা নদীর পানি ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমার কিছুটা ওপরে অবস্থান করলেও আর সব কটি নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে অবস্থান করছিল।
জেলার আশ্রয়কেন্দ্রগুলো থেকে অধিকাংশ লোকজন নিজেদের ঘরবাড়িতে ফিরে গেছেন। সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, জেলার ৫৫১টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৪৪০ জন অবস্থান করছিলেন।