যুক্তরাজ্যে আরো কঠোর হচ্ছে অভিবাসনবিধি

যুক্তরাজ্যে আরো কঠোর হচ্ছে অভিবাসনবিধি

ব্রিটিশ সরকার বুধবার জানিয়েছে, অভিবাসনবিধি আরো কঠোর করা হচ্ছে, যাতে ছোট নৌকায় করে দেশটিতে যাওয়া নথিহীন অভিবাসীদের জন্য পরবর্তীতে যুক্তরাজ্যের নাগরিকত্ব পাওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।

নতুন নির্দেশনায় বলা হয়েছে, যারা সমুদ্রপথে বা যানবাহনের পেছনে লুকিয়ে যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করবে, সাধারণত তাদের নাগরিকত্বের আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হবে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেছেন, ‘এই নির্দেশনা আরো কঠোর পদক্ষেপ নিশ্চিত করছে, যাতে স্পষ্ট করা যায়, যারা অবৈধভাবে যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করেছে, বিশেষ করে ছোট নৌকায় আসা ব্যক্তিরা, তাদের ব্রিটিশ নাগরিকত্বের আবেদন প্রত্যাখ্যাত হওয়ার ঝুঁকির মুখে পড়তে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের লেবার সরকার অভিবাসন কমানোর চাপের মুখে রয়েছে।

গত জাতীয় নির্বাচনে নাইজেল ফারাজের কট্টর অভিবাসনবিরোধী রিফর্ম ইউকে পার্টি আনুমানিক ৪০ লাখ ভোট পেয়েছিল, যা যুক্তরাজ্যের কট্টর ডানপন্থী কোনো দলের জন্য নজিরবিহীন সাফল্য।
তবে এই নীতির পরিবর্তন কিছু লেবার সংসদ সদস্যর সমালোচনার মুখে পড়েছে। সংসদ সদস্য স্টেলা ক্রিসি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে লিখেছেন, ‘যদি আমরা কাউকে শরণার্থী মর্যাদা দিই, তাহলে তাদের ব্রিটিশ নাগরিক হওয়ার পথ বন্ধ করা ঠিক নয়। এতে তারা চিরকাল দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হয়ে থাকবে।


অভিবাসনবিষয়ক ব্লগ ফ্রি মুভমেন্ট জানিয়েছে, এই পরিবর্তনের ফলে ‘তাৎক্ষণিকভাবে বিপুলসংখ্যক শরণার্থীর ব্রিটিশ নাগরিক হওয়ার পথ বন্ধ হয়ে যেতে পারে’। ব্লগটি এই পদক্ষেপকে ‘অত্যন্ত প্রতিহিংসাপরায়ণ ও সমাজে অভিবাসীদের একীভূত হওয়ার জন্য ক্ষতিকর’ বলে বর্ণনা করেছে।

অন্যদিকে এ ঘোষণার আগে এই সপ্তাহে পার্লামেন্টে সরকারের নতুন সীমান্ত নিরাপত্তা, আশ্রয় ও অভিবাসন বিল নিয়ে আলোচনা হয়েছে, যেখানে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে ‘সন্ত্রাস দমনমূলক ক্ষমতা’ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে, যেন তারা চ্যানেল পার হয়ে যুক্তরাজ্যে অনিয়মিত অভিবাসী আনায় জড়িত চক্র ভেঙে দিতে পারে।

আইনি ও নথিহীন—উভয় ধরনের অভিবাসন বর্তমানে রেকর্ড পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে।

এটি ছিল ২০২৪ সালের জুলাইয়ে স্টারমারের ক্ষমতায় আসার নির্বাচনের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক ইস্যু। ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই স্টারমার তার কনজারভেটিভ পূর্বসূরি ঋষি সুনাকের পরিকল্পনা বাতিল করেন, যেখানে নথিহীন অভিবাসীদের রুয়ান্ডায় নির্বাসিত করার কথা ছিল। এর পরিবর্তে তিনি প্রতিশ্রুতি দেন, ‘চোরাচালান চক্র ধ্বংস করা হবে’ এবং অভিবাসনের সংখ্যা কমিয়ে আনা হবে।
২০২৪ সালে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের মধ্যবর্তী চ্যানেল অতিক্রম করে যুক্তরাজ্যে প্রবেশকারী মানুষের সংখ্যা ছিল ৩৬ হাজার ৮১৬, যা ২০২৩ সালের ২৯ হাজার ৪৩৭ থেকে ২৫ শতাংশ বেশি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, এই সংখ্যা আরো বাড়তে পারে।

সূত্র : এএফপি