সিলেট ও সুনামগঞ্জে দীর্ঘস্থায়ী বন্যা আতঙ্ক, চরম জনদুর্ভোগ

সিলেট ও সুনামগঞ্জে দীর্ঘস্থায়ী বন্যা আতঙ্ক, চরম জনদুর্ভোগ

টানা বৃষ্টিপাতে সিলেট ও সুনামগঞ্জে নদ-নদীর পানি অনেক স্থানে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে নতুন করে সৃষ্টি হচ্ছে চরম জনদুর্ভোগ। দীর্ঘস্থায়ী বন্যার আতঙ্কে ভুগছেন লোকজন। সুনামগঞ্জে সুরমা নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় জেলা সদরের সাথে তাহিরপুর-বিশ্বম্ভরপুরের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেয়া তথ্য অনুযায়ী তৃতীয় দফা বন্যার ১০ দিন পরও সুরমা-কুশিয়ারা নদীর তিনটি পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গতকাল শুক্রবার সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্ট বিপদসীমার ৪২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। কুশিয়ারা নদীর পানি আমলশিদ পয়েন্টে বিপদসীমার ২১ সেন্টিমিটার এবং ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে বিপদসীমার ৮৫ সেন্টিমিটার ওপর প্রবাহিত হচ্ছিল।

সিলেট আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মোহাম্মদ সজীব হোসাইন বলেন, গত বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে গতকাল শুক্রবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সিলেটে ২১ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে রাত ৯টার মধ্যে ৫১ দশমিক ৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়।

প্রসঙ্গত, সিলেটে তৃতীয় দফা বন্যার পানি কমতে থাকলেও গত বুধবার রাত থেকে ৪র্থ দফা নদ নদীর পানি বাড়তে থাকে। সেই পানি ধীর গতিতে নামতে শুরু করেছে। ৩ ঘণ্টা পর পর ১ সেন্টিমিটার করে পানি কমছে। সুরমা কুশিয়ারার তিনটি পয়েন্টে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সিলেটের এখনো ৯ হাজার বানভাসি বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছেন।

এদিকে, গত বৃহস্পতিবার রাতে সিলেট জেলা প্রশাসনের বন্যা সংক্রান্ত এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, বন্যায় জেলার ১৩টি উপেজেলার ৯৪টি ইউনিয়নের ১ হাজার ৩৩টি গ্রাম প্লাবিত রয়েছে। এতে পনিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন ৫ লাখ ৩৪ হাজার ৪৬৮ জন মানুষ। এসব এলাকায় ২১০টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৯ হাজার ২১ জন মানুষ অবস্থান করছে। এরমধ্যে বালাগঞ্জ, ওসমানীনগর, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার উপজেলায় বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় দুর্ভোগ বেড়েছে। মাসখানেক ধরে অনেকেই আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছেন।

প্রকৃতির বৈরীতা সুনামগঞ্জে কোনোভাবেই থামছে না। বানের জলের উঠানামার খেলায় প্রতিনিয়ত ভুগছেন দুর্গত এলাকার মানুষজন। জুন মাসের মাঝামাঝি থেকে টানা এক মাস ধরে বানের জলের সাথে লড়াই করছেন জেলার বানভাসিরা। দফায় দফায় আক্রান্ত হচ্ছে জেলার নিম্নাঞ্চল। এক দিকে নদীর পানি কমলে অন্যদিকে দিকে বাড়ে। ভারি বৃষ্টি আর ক্ষণিকের রোদের ঝিলিকের লুকোচুরি খেলায় আশাদূরাশায় অতিষ্ঠ হাওর ও নদী তীরবর্তী লাখো বাসিন্দারা।

এরই মধ্যে গেল কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিপাত আর পাহাড়ি ঢলে তৃতীয় দফা বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে জেলার সদর, বিশ্বম্ভরপুর, ছাতক, দোয়ারাবাজার, শান্তিগঞ্জ, জগন্নাথপুর, জামালগঞ্জ, তাহিরপুর উপজেলার নিম্নাঞ্চলে। নতুন করে পানিবন্দি সংশ্লিষ্ট এলাকার কয়েক লাখ মানুষ। টানা বৃষ্টিতে সুরমা নদীর পানি একাধিক পয়েন্টে বিপদসীমা ছাড়িয়েছে। তাহিরপুর-বিশ্বম্ভরপুর সড়ক ডুবে যাওয়ায় জেলা শহরের সাথে বন্ধ রয়েছে সরাসরি যোগাযোগ ব্যবস্থা।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানিয়েছে, সুনামগঞ্জে সুরমা নদীর পানি গতকাল শুক্রবার সকাল ৯ টায় বিপদসীমার ৩০ সেন্টিমিটার ওপরে ছাড়িয়ে যায়। গত ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে বৃষ্টিপাত হয়েছে ১৫৫ মিলিমিটার আর চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টিপাত ১৬০ মিলিমিটার। দিনে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় পানি ২০ সেন্টিমিটার কমে আসলেও উজানে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা থাকায় ফের পানি বৃদ্ধি পেয়ে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকবে বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার।

এদিকে সিলেট ও সুনামগঞ্জ অঞ্চলে আগামী ৪৮ ঘণ্টায় ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণের আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। এমন পূর্বাভাসে উদ্বেগ ও উৎকন্ঠায় বন্যা কবলিত এলাকার মানুষজন। দীর্ঘদিন পানিবন্দি থাকায় কর্মহীন অবস্থায় নিম্ন আয়ের মানুষজন। চরম স্বাস্থ্যঝুঁকিতে দুর্গত এলাকার নারী, শিশুসহ বয়স্করা। এই পরিস্থিতিতে সরকারি-বেসরকারি সহায়তা চেয়েছেন ক্ষতিগ্রস্তরা।

সুনামগঞ্জ পৌর শহরের বড়পাড়ার বাসিন্দা বলেছেন, আমরা খুব কষ্টে আছি। একবার পানি নামলে আবার উঠে। এই কষ্টের অবসান কবে হবে জানিনা। সরকার যদি কোনো ব্যবস্থা না করে তাহলে মানুষের যাওয়ার জায়গা নেই।

জামালগঞ্জ উপজেলা ভীমখালি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আক্তার হোসেন বলেন, তৃতীয় দফায় বন্যার পানিতে নতুন করে ডুবতেছে বাড়ি ঘর। মানুষের কষ্টের অন্ত নেই। বড় বিপাকে মানুষ। এমন আস্থায় বানভাসির পাশে সকল মহলের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।

এদিকে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় ত্রাণ সহযোগিতা অব্যাহত রাখার কথা জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইশবাল চৌধুরী। সরকারি বরাদ্দ পর্যাপ্ত রয়েছে বলে জানান তিনি।