সিলেটে সাম্প্রদায়িক হামলা নিয়ে ধোঁয়াশা

সিলেটে সাম্প্রদায়িক হামলা নিয়ে ধোঁয়াশা

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ছাত্র-জনতার বিক্ষোভে সিলেটে সাম্প্রদায়িক হামলা নিয়ে ধোঁয়াশা চলছে। দলের পদবি বহন করেন না, এমন সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বাসাবাড়িতে হামলার সংখ্যা খুবই কম। যাদের বাড়িঘরে হামলার ঘটনা ঘটেছে তারা সবাই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী। পূজা উদ্‌যাপন পরিষদসহ কয়েক সংগঠনের নেতাদের দাবি-হামলায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বাসা কিংবা বাড়িতে থাকা পারিবারিক উপাসনালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সার্বজনিন কোনো মন্দির বা মণ্ডপে হামলার ঘটনা ঘটেনি। 

গত ৫ই আগস্ট সারা দেশের মতো সিলেটেও ছাত্র-জনতার বিজয় উল্লাস থেকে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। দীর্ঘদিনের পুঞ্জিভূত ক্ষোভ থেকে এ ধরনের ঘটনা ঘটে। এ সময় নগর ও জেলায় ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। সিলেট নগরে সনাতন ধর্মাবলম্বী আওয়ামী লীগ নেতাদের বাসাবাড়িতে ভাঙচুর করা ছাড়াও আগুন দেয়া হয়।

এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- সাবেক এমপি এডভোকেট রঞ্জিত সরকারে গোপালটিলার বাসা, নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি জগদীশ দাসের ফার্মেসি ও কার্যালয়, স্বেচ্ছাসেবক লীগ জেলার সিনিয়র সহ-সভাপতি পিযূষ কান্তি দে’র বাড়ি, সেক্রেটারি দেবাংশু দাশ মিঠুর বাড়িসহ কয়েকজন সিনিয়র ও জুনিয়র নেতার বাড়িঘরে হামলার ঘটনা ঘটে। 

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, রাজনৈতিক কারণ থেকে সিলেটে সনাতন ধর্মাবলম্বী আওয়ামী লীগ নেতাদের বাসায় ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। তবে কোথাও কোনো মন্দিরে সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটেনি। 

সিলেট নগর পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক চন্দন দাস বলেন, সিলেটের কোথাও মন্দির কিংবা মণ্ডপে হামলার কোনো ঘটনার খবর আমাদের কাছে নেই। বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটেছে। সেগুলোকে সাম্প্রদায়িক হামলা বলা যৌক্তিক হবে না। তবে নগরের ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বিক্রম কর সম্রাটের দাড়িয়াপাড়াস্থ বাসায় হামলা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, যাদের বাসায় হামলা হয়েছে সেগুলো রাজনৈতিক নেতার বাসা বা বাড়ি। নগরের ১২ নম্বর ওয়ার্ডের ভাঙ্গাটিকর এলাকায় জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের পীযূষের বাসায় হামলার ঘটনাকালে তার পারিবারিক মন্দির কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার খবর রটেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় কাউন্সিলর সিকন্দর আলী।

সার্বজনিন মন্দিরে কেউ হামলা করেনি। সেটি তার নেতৃত্বে স্থানীয় এলাকাবাসী রক্ষা করেছেন। জায়গা দখলের উদ্দেশ্যে নগরের জিন্দাবাজারে রাধা গোবিন্দ জিউর আখড়ায় বিএনপি নেতা এজাজ উদ্দিনের নেতৃত্বে ৮ই আগস্ট বিকালে একদল দুর্বৃত্ত হামলা চালিয়েছিল। সেবায়েত রাহুল দেবনাথ জানিয়েছেন, এজাজ দীর্ঘদিন দেবোত্তর সম্পত্তি দখলে রেখে হোটেল ‘ক্যাফে নূরজাহান’সহ আরও কিছু প্রতিষ্ঠান দখলে রেখেছেন। বৃহস্পতিবার দুষ্কৃতকারীদের নিয়ে হিন্দুদের মন্দিরের প্রধান গেটে তালা ঝুলিয়ে দেয় ও হিন্দুদের ঘরবাড়ি লুটপাট করার চেষ্টা করে এবং হিন্দু ব্যবসায়ীর দোকান দখল করতে এসে শাটার-এ তালা ঝুলিয়ে দেয়। পরে পাড়ার হিন্দুদের সম্মিলিত প্রতিক্রিয়ায় উদ্ধার হয়। পরবর্তীতে স্থানীয় বিএনপি নেতা ও সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় তালা খোলা হয়। ওখান থেকে সেনা সদস্যরা ৪ জনকে আটক করে নিয়ে যান। বিএনপি’র চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদিরসহ স্থানীয় বিএনপি নেতারা এলাকা পরিদর্শন করেছেন। তবে এটি কোনো সাম্প্রদায়িক হামলা নয় বলে দাবি করেছেন মন্দিরের সেবায়েত অংশ। মন্দিরের ভূমি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলা বিরোধের জেরে এ ঘটনা ঘটেছে। 

সিলেট জেলার কোথাও মন্দির কিংবা সনাতন ধর্মীয় কোনো উপাসনালয়ে হামলার কোনো ঘটনা ঘটেনি বলে জানিয়েছেন পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের জেলার সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট রঞ্জন ঘোষ। তিনি জানান, জকিগঞ্জ ও জৈন্তাপুরে ৩টি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে। ছাত্র-জনতার বিজয় আনন্দের দিন জকিগঞ্জের কালিগঞ্জে সজল নামে এক ব্যবসায়ীর মিষ্টির দোকান ও গুদাম লুটপাট করা হয়েছে। জকিগঞ্জ বাজারে সুজন দেব’র একটি জুয়েলারি দোকানে হামলা ও লুটপাটের খবর তাদের কাছে এসেছে।

একই সময় জৈন্তাপুরের হাজারী সেনগ্রামে স্কুল শিক্ষক দুলাল দেবের বাড়িতে হামলা ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে বলে জানান তিনি। ওই ৩ ঘটনায় আক্রান্তরা নির্দলীয় ব্যক্তি বলে দাবি করেন এডভোকেট রঞ্জন। তিনি জানান, সবকিছু স্বাভাবিক হলে তাদের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে আইনি উদ্যোগ নেয়া হবে। এদিকে দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দুদের বাড়িঘর-মন্দিরে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, হামলা, লুটপাটের প্রতিবাদে সম্মিলিত সনাতনী ছাত্র সমাজের উদ্যোগে রোববার বিকালে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হয়। সেখান থেকে সরকারের কাছে ৮ দফা দাবি উপস্থাপন করা হয়। আয়োজকদের পক্ষ থেকে সিদ্ব মাধব দাস এ সংক্রান্ত একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি গণমাধ্যমে প্রেরণ করেছিলেন। তিনি আবার সিলেট ইসকনের সংশ্লিষ্ট পুরোহিতও। গতকাল যোগাযোগ করা হলে সিদ্ব মাধব দাস জানান, দেশব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে সিলেটে এটি পালন করা হয়েছে। বৃহত্তর সিলেটে ইসকনের ২০টি মন্দির রয়েছে। নগরের কাজলশাহ এলাকায় তাদের সবচেয়ে বড় মন্দির। এসব মন্দির কিংবা উপাসনালয়ে কোনো হামলা হয়নি।