সিলেটে ১৯ এমপিসহ আ. লীগের নেতাকর্মীরা লাপাত্তা

সিলেটে ১৯ এমপিসহ আ. লীগের নেতাকর্মীরা লাপাত্তা

সিলেটে কয়েক মাস আগেও মন্ত্রী, এমপিসহ আওয়ামী লীগের বাঘা বাঘা নেতাকর্মীরা ছিলেন সরব। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শুরুর দিকে সিলেটের আওয়ামী লীগ নেতারা বিভিন্ন বিবৃতি দিয়ে বড় বড় বুলি আওড়ান; কিন্তু শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর তাদের খোঁজ মিলছে না। সিলেটের ১৯ এমপিসহ আওয়ামী লীগের বাঘা বাঘা নেতারাও লাপাত্তা। তাদের কাউকেই খোঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। 

এমনকি আওয়ামী পরিবারের সিটি মেয়র, পৌর মেয়রসহ অনেক জনপ্রতিনিধিরও হদিস মিলছে না। রাজনৈতিক প্রভাবশালীরাও দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছেন। বৈধ-অবৈধ পথে গোপনে দেশ ছাড়ছেন অনেকেই। কেউ একা, কেউ আবার সপরিবারে। অনেকে ভয়ে দেশের অভ্যন্তরে আত্মগোপনে চলে গেছেন। শুধু মন্ত্রী-এমপি বা প্রভাবশালীই নয়, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের শীর্ষ নেতারাও ভয়ে আত্মগোপনে গেছেন। এই তালিকায় আছেন আওয়ামী লীগের দলীয় প্রভাবশালী ব্যবসায়ীও। 

সিলেটের মন্ত্রী-এমপিদের কেউ কেউ দেশ ত্যাগ করে লন্ডন, আমেরিকায় পাড়ি জমিয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। ফোনে কল দিয়ে কাউকেই পাওয়া যায়নি। মোবাইল নম্বর বন্ধ পাওয়া গেছে। বাসা-বাড়িতেও কেউ নেই। ধারণা করা হচ্ছে তাদের বেশির ভাগ নেতাকর্মী পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে পাড়ি জমিয়েছেন। কিংবা ভারতের পোর্ট ব্যবহার করে বিভিন্ন দেশে পালিয়েছেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ থেকে পলায়নের খবর পেয়ে সিলেটে আওয়ামী লীগের এমপিসহ অনেক নেতাকর্মীর বাসায় হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।

এদিন জনতার আনন্দ মিছিল শেষে মোটরসাইকেলে মহড়া দিয়ে একদল যুবক নগরীর শাপলাবাগ এলাকায় সাবেক প্রবাসী ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী ও সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরীর বাসভবন ভাঙচুর ও আগুন ধরিয়ে দেয়। পার্শ্ববর্তী পূর্ব শাপলাবাগ এলাকায় সিলেট সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আজাদুর রহমান আজাদ, গোপালটিলা এলাকায় অবস্থিত সুনামগঞ্জ-১ আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য (এমপি) রণজিত চন্দ্র সরকার, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমদ, সহ-সভাপতি আসাদ উদ্দিন ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন খানের বাসায় হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। 

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানার অবৈধ টাকার রক্ষক হিসেবে চিহ্নিত, অবৈধ পথে আসা চিনি কান্ডের নায়ক আলোচিত নেতা যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর বাসায় একদল দুর্বৃত্ত হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। আকস্মিক হামলা চালায় সিলেট জেলা জাসদের সভাপতি লোকমান আহমদ ও নগরীর ৫নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রেজওয়ান আহমদের বাসায়। 

এছাড়াও ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে আওয়ামী লীগ সমর্থিত অনেক ব্যবসায়ীর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে। লুটপাট হয়েছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) কার্যনির্বাহী সদস্য ও সিলেট জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মাহি উদ্দিন আহমদ সেলিমের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মাহায়। উপজেলাগুলোতে ও বিএনপি নেতাকর্মীদের হামলার শিকার হন জনপ্রতিনিধি ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বাসাবাড়িতে। 

গোয়ানইঘাটে কয়েকশ নেতাকর্মী হামলা চালায় সিলেট জেলা পরিষদের সদস্য সুবাস দাস এর বাসায়। এ সময় ভাঙচুর করে বাসার সবকিছু লুট করে নিয়ে যায়। এ সময় তার পরিবারের সদস্যরা আহত হন। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা দেশে থাকলেও জনরোষের কবলে পড়ার ভয়ে গা-ঢাকা দিয়েছেন। 

খবর পাওয়া গেছে আওয়ামী লীগের বেশিরভাগ নেতাকর্মী সরকার পদত্যাগের দিন ৫ আগস্ট থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময় দেশ ত্যাগ করেছেন। 

এর মধ্যে সিলেট-১ আসনের এমপি, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, সিলেট-২ আসনের এমপি, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী, জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী, সিলেট-৩ আসনের এমপি হাবিবুর রহমান হাবিব, সিলেট-৪ আসনের এমপি, সাবেক মন্ত্রী ইমরান আহমদ, সিলেট-৫ আসনের এমপি ফুলতলী পীরের ছেলে আঞ্জুমানে আল ইসলাহর সভাপতি মাওলানা মোহাম্মদ হুছামুদ্দীন চৌধুরী, সিলেট-৬ আসনের এমপি, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, সুনামগঞ্জ-১ আসনের এমপি, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রণজিত চন্দ্র সরকার, সুনামগঞ্জ-২ আসনের এমপি, সাবেক মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেন গুপ্তের সহধর্মিণী জয়া সেন গুপ্তা, সুনামগঞ্জ-৩ এমপি, সাবেক পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান, সুনামগঞ্জ-৪ আসনের এমপি পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক, সুনামগঞ্জ-৫ আসনের এমপি মুহিবুর রহমান মানিক। মৌলভীবাজার-১ আসনের এমপি, সাবেক পরিবেশ মন্ত্রী বড়লেখা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. শাহাব উদ্দিন, মৌলভীবাজার-২ আসনের এমপি, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, মৌলভীবাজার-৩ আসনের এমপি মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান, মৌলভীবাজার-৪ আসনের এমপি, সাবেক কৃষি মন্ত্রী মো. আব্দুস শহীদ। হবিগঞ্জ-১ আসনের এমপি আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী, হবিগঞ্জ-২ আসনের এমপি ময়েজ উদ্দিন শরীফ, হবিগঞ্জ-৩ আসনের এমপি, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আবু জাহির, হবিগঞ্জ-৪ আসনের এমপি, সাবেক যুবলীগ নেতা সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন দেশত্যাগ করেছেন।