সিকৃবিতে অনিয়ম

প্রতি বছর ব্যাংক থেকে টাকা সরান পরিচালক ছানোয়ার

প্রতি বছর ব্যাংক থেকে টাকা সরান পরিচালক ছানোয়ার

সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (সিকৃবি) ২০১২ সালের ২৪শে সেপ্টেম্বর শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা না থাকা সত্ত্বেও অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে শারীরিক শিক্ষা পরিচালক হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত মো. ছানোয়ার হোসেন মিয়া ক্ষমতার দাপটে অনিয়মকে নিয়মে পরিণত করেছেন।

২০১০ সালে পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞাপনের শর্তে পরিচালক পদে নিয়োগের জন্য শিক্ষা জীবনের কোনো স্তরে ৩য় শ্রেণি গ্রহণ নয় উল্লেখ থাকলেও এইচএসসি ও স্নাতক পর্যায়ে দুইটিতে ৩য় শ্রেণির অধিকারী ছানোয়ার মিয়া সরকারি শারীরিক শিক্ষা কলেজের সহকারী শিক্ষক (বেতন স্কেল ৮ হাজার টাকা ও গ্রেড ১০) থাকা অবস্থায় সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনিয়মের মাধ্যমে পরিচালক পদে (৩য় গ্রেডে) নিয়োগ পান। অথচ বেতন  স্কেলের ১০নং গ্রেড হতে ৩নং গ্রেডের পদে এভাবে এক লাফে নিয়োগ পাওয়া কোনো ভাবেই আইনসম্মত হয়নি। 

পরিচালক (শারীরিক শিক্ষা) পদে নিয়োগ পেতে হলে সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে উপ-পরিচালক পদে ৫ বছরের অভিজ্ঞতাসহ প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা হিসেবে ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা থাকার বাধ্যবাধকতা থাকলেও সম্পূর্ণ অনিয়মের মাধ্যমে ৩য় শ্রেণির পদে কর্মরত ছানোয়ার হোসেনকে নিয়োগ দেয়া হয়। সাবেক ভিসি প্রফেসর ড. শহীদ উল্লাহ তালুকদারের মেয়ের জামাতা ডা. আতিকুজ্জামানের ইচ্ছায় আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে এই অবৈধ নিয়োগ চূড়ান্ত করার অভিযোগ রয়েছে।

নিয়োগের সময়ই এ নিয়ে কর্মকর্তা, কর্মচারীদের ক্ষোভ ছিল। ওই সময়ের ভিসিসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কাছে আপত্তি জানালেও তখন কেউ কর্ণপাত করেননি। নিয়োগ পেয়েই দলীয় প্রভাবে দাপ্তরিক কেনাকাটায় আর্থিক অনিয়ম শুরু করেন ছানোয়ার মিয়া। সাম্প্রতিক সময়ে শারীরিক শিক্ষা বিভাগের জমা খরচের রেজিস্টার ও ব্যাংক স্টেটমেন্ট থেকে আর্থিক নয়ছয়ের বিষয়টি সহজেই ধরা পড়ে। 

এতে দেখা গেছে; ২০১৬-১৭ অর্থবছরে শারীরিক শিক্ষা বিভাগের জমা খরচের রেজিস্টারে ৩ লাখ ৬৪ হাজার টাকা জমার বিপরীতে পুরো টাকাই খরচ দেখিয়েছেন। ২০১৭ সালের ৩০শে জুন তারিখে বিভাগের ব্যাংক স্টেটমেন্টে ৯৩ হাজার ১২৫ টাকা স্থিতি থাকা সত্ত্বেও তিনি পুরো টাকা ৩০শে জুনের মধ্যে খরচ দেখিয়ে পরবর্তীতে বাকি টাকা আত্মসাৎ করেন। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৪ লাখ ১৬ হাজার ৩১১ টাকা জমার বিপরীতে পুরো টাকাই খরচ দেখানো হয়েছে। ২০১৮ সালের ৩০শে জুনের ব্যাংক স্টেটমেন্টে ৪ লাখ ১ হাজার ৮২৫ টাকার স্থিতির বিষয়টি ধরা পড়ে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৭ লাখ ৭১ হাজার ৭৩৬ টাকা জমা এবং ৭ লাখ ৭১ হাজার ৭৩৬ টাকা খরচ দেখালেও হিসেবে প্রায় লক্ষাধিক টাকার গরমিল ধরা পড়ে। করোনাকালীন সময়ে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৩ লাখ ৩৬ হাজার ৫০ টাকা জমার বিপরীতে খরচ দেখালেও ২০২০ সালের ৩০শে জুনের ব্যাংক স্টেটমেন্ট ৫ লাখ ৯৯১ টাকার স্থিতির বিষয়টি ধরা পড়ে। ২০২১-২২ অর্থবছরে ১ লাখ ৮৭ হাজার ২৯০ টাকা জমা এবং সম্পূর্ণ টাকা খরচ দেখালেও ২০২২ সালের ৩০শে জুনের ব্যাংক স্টেটমেন্টে ২ লাখ ১ হাজার ১৯৬ টাকার স্থিতির বিষয়টি ধরা পড়ে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৫ লাখ ৪৭ হাজার ৫৫০ টাকা জমা এবং সম্পূর্ণ টাকা খরচ দেখালেও ২০২৩ সালের ৩০শে জুনের ব্যাংক স্টেটমেন্টে ৭ লাখ ২ হাজার ৯১৬ টাকার স্থিতির বিষয়টি ধরা পড়ে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৭ লাখ ৯৮ হাজার ৩৯০ টাকা জমার পুরোটাই খরচ দেখানো হয়। তবে ২০২৪ সালের ৩০শে জুনের ব্যাংক স্টেটমেন্টে ১ লাখ ১২ হাজার ১২৭ টাকার স্থিতির বিষয়টি ধরা পড়ে। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন- ছানোয়ার মিয়া যোগদানের পর থেকে বিভিন্ন খাত দেখিয়ে বিভাগের জন্য টাকা উত্তোলন করলেও নিজ হাতে তা খরচ করে এসেছেন। সুত্র: মানবজমিন