রুদ্র হত্যা মামলা: মেয়র, সাবেক উপাচার্য, সাবেক তিন এমপিসহ ৩ শতাধিক আসামি

রুদ্র হত্যা মামলা: মেয়র, সাবেক উপাচার্য, সাবেক তিন এমপিসহ ৩ শতাধিক আসামি

বৈষাম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রুদ্র সেন নিহতের ঘটনায় সোমবার মামলা হয়েছে।

সোমবার দুপুরে সিলেটের অতিরিক্তি চিফ মেট্রোপলিটন আব্দুল মোমেনের আদালতে এই মাশরাটি দায়ের করেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন, শাবিপ্রবি শাখার সমন্বয়ক হাফিজুল ইসলাম।

মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, শাবিপ্রবির সদ্য সাবেক উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন, সর্বশেষ সংসদের একাধিক সদস্য, আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের আসামি করা হয়েছে।

আদালত অভিযোগটি এফআইআর হিসেবে গ্রহণ রার জন্য সংশ্লিস্ট থানাকে নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানান বাদীপক্ষের আইজীবী আব্দুর রব।

রুদ্র সেন মৃত্যুর ঘটনায় মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল , শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য পদত্যাগী উপচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমদ , প্রক্টর কামরুজামান চৌধুরী,  সিলেট সিটি কর্পোরেশেনের মেয়র  আনোয়ারুজ্জামান চৌধূরী, সিলেট-৩ আসনের সাবেক সাংসদ হাবিবুর রহমান হাবিব, সুনামগঞ্জ ১ আসনের সাবেক সাংসদ রঞ্জিত সরকার, মৌলীভাজার-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল সহ ৭৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত নামা আরো ৩০০ জনকে আসামি করা হয়।

আদালতে জমা দেয়া এজাহার অনুসারে রুদ্র সেন হত্যা মামলার আসামিরা হলেন- সিলেট মহানগর পুলিশের উপকমিশনার আজবাহার  আলী, সহকারী পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ সাদেক দস্তগীর কাউসার, জালালাবাদ থানার অফিসার ইনচার্জ  মো. মিজানুর রহমান, পরির্দশক (তদন্ত) আবু খালেদ মো. মামুন,  সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সিলেট সিটি মেয়র আনোয়ারুজাজামান চৌধুরী, সিলেট-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিব, শাবিপ্রবির উপাচার্য ফডিরদ উদ্দিন, সাবেক প্রো-ভিসি কবির হোসেন, সাবেক প্রক্টর কামরুজ্জামান চৌধুরী, মৌলভীবাজার-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, সুনামগঞ্জ-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য রনজিত সরকার, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ন সম্পাদক ও ২০ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদ, সহ-সভাপতি ও ৮ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জগদীশ চন্দ্র দাস, যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক বিধান কুমার সাহা, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহভাপতি আফতাব হোসেন খান, মহানগর যুবলীগ সভাপতি আলম খান মুক্তি,  জেলা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক রাহেল সিরাজ, সভাপতি নাজমুল ইসলাম, মহানগর ছাত্রলীগ সভাপতি কিশোয়ার জাহান সৌরভ, সাধারণ সম্পাদক নাঈম আহমদ, ৩২ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর রুহেল আহমদ, মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সজল দাস অনিক, এসআই রেজওয়ান আহমদ, কনস্টেবল রনি চন্দ্র রায়, এসআই নহোরেন্দু তালুকদার, কনস্টেবল সুজিত সিংহ, অপূর্ব সিংহ, প্রণজিৎ, সুমন, শাবিপ্রবি ছাত্রলীগ সভাপতি খলিলুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক সজিবুর রহমান, সহ-সভাপতি মামুন শাহ, ফারহান রুবেল, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মেহেদী হাসান স্বাধীন, সাইমন ইসলাম, শাবিপ্রবি ছাত্রলীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন, সহ-সভাপতি তানিম খন্দকার, ছাত্রলীগ কর্মী দেলোয়ার হোসেন, শফিউল রাব্বী,  সহ-সভাপতি রেজাউল হক সিজার, ইউসুফ হোসেন টিটু, মনসুর আলম নিরব, সাংগঠনিক সম্পাদক লোকমান হোসেন, আরকে রাকিব হোসেন, শুভ সাহা, সহ-সভাপতি আশিকুর রহমান আশিক, শাবিপ্রবি ছাত্র ফরাহান হোসেন চৌধুরী আরিয়ান, সানি শেখ, ছাত্রলীগ কর্মী  মোহাম্মদ তারেক, সহ-সভাপতি শিমুল মিয়া, আয়াজ চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক অমিত সাহা, ‘আমরা সাস্টিয়ান’ গুপের এডমিন আব্দুল কাদির মোহাম্মদ রেদোয়ান, নুরুল ইসলাম, ময়নুল ইসলাম, আহমদ সাজন, হাসান আহমদ, মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য জাহিদ সরোয়ার সবুজ, সিসিকের ৩৮ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হেলাল উদ্দিন, শহীদ মু. অকিল অপু, মো. শাহজাহান, মু. আপ্তাব হোসেন সিরাজী, অহিদ উদ্দিন দুলাল, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি রশিদ আহমদ, জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল লতিফ রিপন, মুজিবুর রহমান মালদার, আবু সুফিয়ান উজ্জ্বল, সিসিকের ১০ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর তারেক উদ্দিন তাজ, মাজহারুল ইসলাম সুমন, শাহনুর আলম, রুহিন আহসান খান, আমির হোসেন খানসহ অজ্ঞাত আরও ৩০০ জন।

প্রসঙ্গত, ১৮ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে শাবিপ্রবিতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ওইদিন পুলিশের ধাওয়ায় নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে কয়েক বন্ধুর সঙ্গে খাল পার হতে গিয়ে ডুবে মারা যান তিনি। রুদ্র শাবিপ্রবির কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড পলিমার সায়েন্স বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।

সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে রুদ্রের বন্ধু ইমতিয়াজ ও সিয়াম জানিয়েছিলেন, ‘রুদ্র প্রথম থেকেই কোটা সংস্কার আন্দোলনে ছিল। ১৮ জুলাই পুলিশের হামলায় সে পড়ে গিয়ে একটু আঘাত পায়। পরে আমরা মেসে ফিরে যাই। বিকেলে ছাত্রলীগ মহড়া দেয় এবং সন্ধ্যার আগ থেকে পুলিশের সঙ্গে আবারও সংঘর্ষ হলে আমরা একসঙ্গে অনেকে মেসে থাকা অনিরাপদ মনে করি। মেসের পেছন দিয়ে বাগবাড়ীর দিকে যাচ্ছিলাম। ভেলায় করে খাল পার হওয়ার সময় আমরা পড়ে যাই। সবাই সাঁতরে তীরে উঠলেও রুদ্র ডুবে যায়। অনেক খোঁজাখুঁজির পর তাকে পাই। পরে হাসপাতালে নিলে তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।’