যুক্তরাজ্যে মহাসংকটে নতুন আগত বাংলাদেশিরা, পাচ্ছেন না বাসস্থান-চাকরি

যুক্তরাজ্যে মহাসংকটে নতুন আগত বাংলাদেশিরা, পাচ্ছেন না বাসস্থান-চাকরি

সোনার হরিণ ধরতে গত তিন বছরে ব্রিটেনে এসেছেন কয়েক হাজার বাংলাদেশি। এর মধ্যে স্টুডেন্ট ভিসা ও কেয়ার ভিসায় এসেছেন অধিকাংশ প্রবাসীরা। শুধু বাংলাদেশি নয়, একই ক্যাটাগরির ভিসাতে ব্রিটেনে পাড়ি জমিয়েছেন ইণ্ডিয়া, পাকিস্তান, শ্রীলংকাসহ অনেক দেশ থেকেও। স্টুডেন্ট ভিসা ও কেয়ার ভিসায় শুধু আবেদনকারীরা আসেননি সঙ্গে নিয়ে এসেছেন ডিপেণ্ডেন্টদের। এর মধ্যে রয়েছে অনেকের ছেলে-মেয়ে।

পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, স্টুডেন্টরা ব্রিটেনের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করতে এলেও সবাই টার্গেট করছেন লণ্ডন, বার্মিংহাম, ম্যানচেস্টারের মতো বড় বড় শহরগুলোকে। বিধায় উক্ত শহরগুলোতে বাসস্থান সংকট দেখা দিয়েছে মারাত্মকভাবে। অতিরিক্ত ইমিগ্রান্ট আসার কারণে এর প্রভাব পড়েছে ব্রিটেনের সবগুলো শহরেই। প্রথমদিকে আত্মীয়-স্বজনদের বাসায় উঠলেও সপ্তাহখানেক পর সবাইকে খুঁজতে হচ্ছে নিজেদের বাসস্থান। বিশেষ করে জনবহুল শহর লণ্ডনে কোথাও মিলছে না পুরো বাসা, সিঙ্গেল রুম কিংবা মেসেগুলোতেও মিলছে না মাথা গোজার মতো একটি সিট। যারা ডিপেণ্ডেন্ট (স্ত্রী-সন্তান) নিয়ে এসেছেন তাদের অবস্থা বিপজ্জনক। অনেককেই সস্ত্রীক ব্যাচেলারদের সঙ্গে অনিচ্ছা সত্ত্বেও থাকতে হচ্ছে।

পরিচয় প্রকাশ না করা কেয়ার ভিসায় পরিবারসহ আসা এক বাংলাদেশি জানান, ৩৫ লাখ টাকা খরচ করে লণ্ডনে এসেছেন তিনি। কিন্তু স্পনসর করা কোম্পানিতে নেই চুক্তি অনুযায়ী কাজ। প্রথম কয়েকদিন বিভিন্ন আত্মীয় স্বজনদের ঘরে থেকেছেন। কিন্তু তারাও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। ছেলেমেয়ে নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরেছেন, হোটেলে থাকাও তার পক্ষে সম্ভব নয়। শেষমেশ অ্যাসাইলাম আবেদন করে হোম অফিসের বারান্দায় বসে ছিলেন। পরে হোম অফিস তাদেরকে বাসস্থান দিয়েছে। কান্নাজড়িত কণ্ঠে আফসোস করে ওই ব্যক্তি বলেন, ‘ভাই জায়গা-জমিন বেইচ্চা আইছি, দেশ থেকে একটেখা আনারও তৌফিক নাই’। এরকম শত বাঙালী কেয়ার ভিসায় এসে ফেঁসে গেছেন। আতিক নামে এক ছাত্র বলেন, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ধেক ফি পরিশোধ করে এসেছেন। ভেবেছিলেন এখানে কাজ করে তা পরিশোধ করবেন। কিন্তু ছয় মাস হয়ে গেলেও কোনো কাজ জোগাড় করতে পারেননি। বিশ্ববিদ্যালয় তাকে অনিয়মিত করে দিয়েছে।

তিনি বলেন, একদিকে কাজ নেই, অন্যদিকে বাসস্থানের সংকট। কষ্ট আর সহ্য করতে পারছেন না। দেশ থেকেও আর টাকা নিয়ে আসতে পারছেন না। তাই ভাবছেন, এখান থেকে ইউরোপের কোনো দেশে পাড়ি জমাবেন। এরকম শতকরা প্রায় ৮০ ভাগ নতুন আগতদের অবস্থা একই। স্টুডেন্ট ভিসায় ও কেয়ার ভিসায় যারা এসেছেন তাদের মধ্যে বেশিরভাগেই অ্যাসাইলাম আবেদন করা একমাত্র ভরসা। তবে অ্যাসাইলাম গ্রান্ট হবে কি-না তারও কোনো গ্যারান্টি নেই।

করোনা পরবতীতে ব্রিটেন অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে উঠতে পারেনি। বহিরাগত জনসংখ্যা বাড়লেও বাড়েনি কর্মসংস্থান। এরই মধ্যে বাংলাদেশ, ইণ্ডিয়া, পাকিস্তানসহ বেশ কয়েকটি দেশ থেকে হাজার হাজার বহিরাগতরা প্রহর গুনছেন সীমাহীন সংকটে থেকে।